শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহিলা শ্রমিক লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের আমি বলব, প্রত্যেককে কথাবার্তায়, আচার আচরণে দায়িত্বশীল হতে হবে। এই সময়ে দায়ীত্বজ্ঞানহীন কোনো কথা বলা সমীচীন নয়, এ সময় ক্ষমতার দাপট দেখানো সমীচীন নয়। ঠান্ডা মাথায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, এটাই আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় মেসেজ।
তিনি বলেন, সারা বিশ্ব সংকটে, একটা নেতিবাচক প্রভাব আজকে বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে। আমরা জানি অনেক মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কস্ট অব লিভিং যেভাবে বেড়ে গেছে, মানুষ কষ্ট করছে এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের সামনে কোনো উপায় ছিল না।
এ সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পণ্যের তুলনামূল মূল্যবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আজকে রাইন নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, সেখানে জাহাজ চলতে পারছে না। ইতালির ১৫ লেকের অধিকাংশ শুকিয়ে গেছে। ফ্রান্সের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এখনও আগুন জলছে। আমেরিকায় মূল্য বৃদ্ধি, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, আমাদের প্রতিবেশী দেশ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান কেউ তো আজ আরামে নেই। বাংলাদেশের জনগণের কষ্ট হচ্ছে। সরকারে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। শেখ হাসিনার ঘুম নেই, আন্তরিকভাবে তিনি আপনাদের এই সংকট উত্তোরণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বিএনপি সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ আজকে সমস্যায় জর্জরিত। আর এটাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের বিরোধী দল সরকার উৎখাতে নামেনি, আমেরিকার বিরোধী দল সরকার উৎখাতে নামেনি, যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল সরকার উৎখাতে নামেনি, জার্মানির বিরোধী দল সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেনি, জাপানের বিরোধীদল প্রোটেস্ট করেনি, বিক্ষোভ মিছিল করেনি। আমাদের প্রশ্ন সেখানে, সহযোগিতা চেয়েছিলাম আমরা। এই দুনিয়ায় সংকটে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, আর বাংলাদেশে তারা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে।
আওয়ামী লীগ সরকার কোনো বিদেশি শক্তির কাছে মাথা নত করে না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিজেরা (বিএনপি) ইচ্ছেমতো মিছিল করছে, পল্টন প্রেসক্লাবের সামনে। এতদিন বলতো আওয়ামী লীগ আমাদের মিছিল মিটিং করতে দিচ্ছে না, এখন নেত্রী বলেছেন ওরা করুক। যখন মিছিল মিটিং করতে পারছে তাদের সাহসের ডানা বিস্তারিত হচ্ছে। এখন তারা বলে বিদেশি শক্তির চাপে পুলিশ বাধা দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, তাহলে এখন শিকার করলেন? যে পুলিশ বাধা দিচ্ছে না। বিদেশি শক্তির চাপে মাথা নত করার মতো ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নন। মনে রাখবেন কোনো শক্তির কাছে আমরা মাথা নত করি না। শেখ হাসিনা আপন শক্তিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বলিয়ান। আমাদের সমস্যা আমাদের সংকট আমাদেরকে সমাধান করতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব বেপরোয়া চালকের মতো আচরণ করছেন। বিএনপির মহাসচিব বলতে বলতে আজকে বেপরোয়া ড্রাইভার হয়ে গেছেন, বেপরোয়া ড্রাইভার এখন কখন যে কোথায় এক্সিডেন্ট ঘটায়! আগুন নিয়ে আসবেন না, বলে দিচ্ছি, সতর্ক করে দিচ্ছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আপনাদের কেউ বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু আগুন সন্ত্রাস নিয়ে যদি নামতে চান, মোকাবিলা করতে চান, তাহলে বলব.. জনতার প্রতিরোধ সুনামিতে পরিণত হবে এবং সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের শক্তি এখনও অজানা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের বিশ্বাসঘাতক যে রাজনৈতিক শক্তি, সবার নাম আমরা জানি না। সবার ভূমিকা এখনও পরিষ্কার নয়। তাই খুনিরা যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করে তখন অনেককেই তিনি টেলিফোন করেছিলেন। তার ডাকে ছুটে এসেছিলেন শুধু একজন, তিনি হলে নিরাপত্তা প্রধান কর্নেল জামিল। এই কর্নেল জামিলকেও সুবহানবাগ মসজিদের পাশে হত্যা করা হয়।
মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সুরাইয়া আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার সাথী, কার্যকরী সভাপতি সামসুন্নাহার বক্তব্য রাখেন।