জানা গেছে, বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই সময় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার তিনি বছর পার না হতেই ২০১৭ সালে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা সংস্কারের কথা বলে ২০১৭ সালের ১ মে উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ। এরপর আর উৎপাদনে ফিরতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিএসইসির দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছর কোম্পানিটিকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আলিফ গ্রুপের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলিফ গ্রুপের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবরে বিএসইসি কিছু শর্ত দিয়ে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণে সম্মতি দেয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়ে চলতি বছরে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে আলিফ গ্রুপ। পুরাতন মেশিন সংস্কারের পাশাপাশি কিছু নতুন মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে এখন কোম্পানিটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হলো।
পরীক্ষামূলক উৎপাদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশের সব থেকে বড় সমস্যা কর্মসংস্থান। ব্যাংকের দুইশ কোটি টাকা লোনসহ হঠাৎ করে একটি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংক বিপদে পড়ে। একই সঙ্গে আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বিপদে পড়েন। আর দুই-তিন হাজার লোক বেকার হয়ে যায়। এখন ওনারা (আলিফ গ্রুপ) দায়িত্ব নিয়েছেন, আশা করা যায় আবার নতুন করে কর্মসংস্থান হবে। এক্সপোর্ট হবে।
তিনি বলেন, আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরের গ্রোথ অনেক হাই। এখানে ক্যাপাসিটি বাড়ানোটা খুবই দরকার। এখানে ওনাদের উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন যে ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে তা হয়তো ফুলফিল হবে। ব্যাংকও তাদের আটকে যাওয়া অর্থ ফেরত পাবে। ওনারা (আলিফ গ্রুপ) এখন ব্যাংকের আটকে যাওয়া ফান্ড গ্রাজুয়ালি পরিশোধ করে রিলিজ করবেন। যেসব বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করে আটকে গিয়েছিলেন তারাও সুবিধা পাবেন।
যারা বিশাল প্রসপেক্টর দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলে নিলো এবং ব্যাংক ঋণ নিয়ে সটকে পড়লো, একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মধ্যে ফেললো- তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর একটা কোম্পানিও বন্ধ হয়নি। তাছাড়া আগে বিএসইসিতে কোনো তদন্ত বিভাগ ছিল না। আমরা তদন্ত বিভাগ করেছি। এখন ফৌজদারি মামলা দায়ের করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগে এটা ছিল না।
তিনি বলেন, আগে একদিনে ৬৫টি কোম্পানি ওটিসিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোকে এখন আমরা দেখছি অ্যাসেট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো একটা একটা করে আমরা করছি এবং ভালো ফলাফল পাচ্ছি। খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে দুই- চারটা কোম্পানি এরইমধ্যে উৎপাদনে চলে গেছে। আমার হিসেবে আমরা যদি ৫০-৬০টা কোম্পানি চালু করতে পারি তাহলে ২০-৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম আরও বলেন, এর জন্য নতুন করে জমি কেনা, জায়গা কেনা, ফ্যাক্টরি করা- এগুলোর কিছু করতে হবে না। শুধু তারা যে কাজগুলো করছেন সেগুলো নতুন করে সার্ভিসিং করে ঠিকঠাক করা, কোথাও কোথাও হয় তো নতুন মেশিন স্থাপন করছেন।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল পুনরুজ্জীবিত করতে কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে এবং কবে নাগাদ পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আজিমুল ইসলাম বলেন, আমরা ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে আরও বেশি লাগবে। আর আমরা চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু করার। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগির পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।