গত সপ্তাহে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ ডলার যেখানে ১১৯ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল; চলতি সপ্তাহের বুধবার ও বৃহস্পতিবার কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ ডলার নেমে এসেছে ১১০ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলাবাজারে ডলারের দাম কমেছে ৯ টাকা।
এদিকে দেশে ডলারের সংকট কাটাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানিতে দেওয়া হয়েছে নানা শর্ত। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দেওয়া হয়েছে নীতিগত ছাড়। এছাড় ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ডলার কারসাজিকারীদের ধরতে চালাচ্ছে অভিযান। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে বাজারে আরও স্থিতিশীলতা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুধবার (১৭ আগস্ট) মানি চেঞ্জারগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফার সীমা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা বৈঠক করে। সেখানে বলা হয় ব্যাংকগুলো ডলার কেনা-বেচায় কত টাকা মুনাফা করবে তা তারা নিজেরাই ঠিক করবে। তবে বেচাকেনার মধ্যে পার্থক্য যেন এক টাকার বেশি না হয়। এসব পদক্ষেপের কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১৬ দিনে ১১৭ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেল জুলাই মাসে দেশে মোট ৫৫৫ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা জুন মাসের তুলনায় ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ কম। জুন মাসে আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ডলারের। তবে জুন মাসে অবশ্য মে মাসের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র ৭ শতাংশ বেশি খোলা হয়েছিল। মে মাসে ঋণপত্র খোলা হয় ৭৪৪ কোটি ডলারের।
এপ্রিল মাস থেকে আমদানি কমতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে মার্চের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। মে মাসেও এপ্রিলের তুলনায় আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে সাড়ে ১৩ শতাংশ।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য অনেক বেড়ে যায়। ফলে বিগত কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। গত বছরের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।
১৬ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৯৫৪ কোটি (৩৯ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন) ডলারে। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুত এ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে প্রায় ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে আমদানিতে রাশ টানার উদ্যোগ শুরু হয় গত মে মাস থেকে। তবে ৪ জুলাই এক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা আরোপ করা হয়। গাড়ি, সোনা, টিভি, ফ্রিজসহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানির এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে শতভাগ। আর জ্বালানি, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, শিল্পে ব্যবহারি কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ কিছু পণ্য বাদে অন্য সবক্ষেত্রে এলসি মার্জিনের ন্যূনতম হার হবে ৭৫ শতাংশ। উভয় ক্ষেত্রে মার্জিনের জন্য ঋণ দেওয়া যাবে না। এর মানে এলসি খোলার সময়ই আমদানিকারকের নিজস্ব উৎস থেকে পুরো অর্থ নগদে দিতে হবে।
এদিকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়ায় গত ৮ আগস্ট দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
এছাড়া ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। কারসাজির অপরাধে মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করাসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে।