১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত থাইল্যান্ডের প্রথম বেসরকারি এ হসপিটাল হার্টের রোগ ও ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে হাসপাতালটির বেশ সুনাম রয়েছে। হার্টের চিকিৎসায় এমন কিছু উন্নতমানের ও আধুনিক প্রযুক্তি এ হসপিটালে রয়েছে যা থাইল্যান্ডের আর কোনো হসপিটালে নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। দ্বিতীয়বার করনারি আর্টরি বাইপাস সার্জারির জন্য বিখ্যাত ব্যাংকক হসপিটাল। বাংলাদেশেও এই হসপিটালটির তিনটি অফিস রয়েছে। অর্থসংবাদের সঙ্গে ব্যাংকক হসপিটালের চিকিৎসা সেবার বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন ব্যাংকক হসপিটাল বাংলাদেশ অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নীলাঞ্জন সেন।
অর্থসংবাদ: বাংলাদেশীরা চিকিৎসা সেবার জন্য ব্যাংকক হসপিটালে কেন যাবে?
ডা. সেন: প্রথমত সর্বোচ্চ মানের সঠিক চিকিৎসা সেবার জন্য ব্যাংকক হসপিটাল প্রসিদ্ধ। কারন এটি ব্যাংককের সবচেয়ে বড় বেসরকারি নেটওয়ার্ক হসপিটাল। থাইল্যান্ডের বিভিন্ন শহর সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪৯ টি হসপিটাল রয়েছে এর নেটওয়ার্কের মধ্যে। এমনকি দক্ষিন এশিয়ায় ফিফার স্বীকৃত একমাত্র হসপিটাল এটি। চিকিৎসার জন্য তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ন, ভালো কন্সালটেন্ট, আধুনিক প্রযুক্তি, সঠিক নার্সিং। এ সবগুলো বিষয়েই সেরা ব্যাংকক হসপিটাল। কারন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে শীর্ষে এবং প্রায় ৬০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে এ হসপিটালে। সুপরিসর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এ হসপিটালের রয়েছে তিনটি বিভাগ- ব্যাংকক হার্ট হসপিটাল, ব্যাংকক ক্যান্সার হসপিটাল ও রিহ্যাবিলাইটেশন হসপিটাল। এছাড়াও নিউরো, ডেন্টাল, মেডিসিন প্রভৃতি বিভাগেও রয়েছেন অভিজ্ঞ সব চিকিৎসক। বর্তমানে ব্যাংকক হসপিটাল বিডিএমএস নামে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হসপিটাল গ্রুপের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বড় এ গ্রুপের প্রধান ব্যাংকক হসপিটাল। প্রায় সব ধরনের সর্বোত্তম মানের আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমাবেশ ঘটেছে এখানে। তাই একে বলা হয় ব্যাংকক হসপিটাল হেড কোয়ার্টার (বিএইচকিউ)। থাইল্যান্ডের আর কোনো প্রাইভেট হসপিটালই এ মানে পৌঁছাতে পারেনি। তাই সেখানে চিকিৎসা সেবার জন্য গেলে সঠিক এবং সর্বোচ্চ মানের সেবার নিশ্চয়তা রয়েছে।
অর্থসংবাদ: কি ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় ব্যাংকক হসপিটালে?
ডা. সেন: সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এ হাসপাতালে। যেসব হাসপাতালে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমাহার বেশি সেখানে চিকিৎসার সফলতাও ততো বেশি। কেননা চিকিৎসক যত বড় ডিগ্রিধারীই হোন, রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রটি সর্বাধুনিক না হলে সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। ব্যাংক হসপিটালে হার্টের রোগীদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না তা নির্ণয় করতে ২৫৬ স্লাইস মাল্টি ডিটেকটর সিটি কার্ডিয়াক এনজিওগ্রাম মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাংকক হাসপাতালে। যা হয়তো অনেক দেশেই নেই। সেখানে এখন থ্রিডি ইমেজ ব্যবহার করা হচ্ছে হার্টের রোগ নির্ণয়ে। ক্যান্সার নির্ণয়ে পেট সিটি ফোর্থ জেনারেশন ব্যবহার করা হচ্ছে। শরীরের কোথাও ক্যান্সারের জীবাণু থাকলে এই যন্ত্রে সহজেই ধরা পড়বে। এমআরআই ৩.৫ টেসলা, ওপেন এমআরআই করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ১ মাত্রার টেসলা (টেসলা হচ্ছে ছবির রেজুলেশন)। যা থাইল্যান্ডের অন্যসব অঞ্চলের হাসপাতালেও নেই। এ কারণে হার্টের রোগীদের আস্থার জায়গা হতে পারে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হাসপাতাল।
অর্থসংবাদ: বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে ভাষাগত সমস্যায় পড়তে হয়, ব্যাংকক হসপিটালে বাঙ্গালি কোন চিকিৎসক রয়েছে কি না?
ডা. সেন: চিকিৎসককে রোগীর সমস্যা বুঝাতে ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা বিষয়। তাই ‘বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিসেস’ নামে বাংলা হেল্প ডেস্ক চালু করেছে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারলে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বাংলাদোভাষী রয়েছে। এমনকি শুধু চিকিৎসকই নয় যদি আগে থেকে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট না থাকে তাহলে কোন ডাক্তারের কাছে কখন দেখাতে পারবেন, কোন টেস্টের জন্য কোন বিল্ডিংয়ে যেতে হবে, কোন কোন রুটে কখন গেলে হসপিটালের ফ্রি বাস সেবা পাওয়া যাবে, থাকা-খাওয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য রয়েছে এ বিভাগটি। ব্যাংকক হসপিটালে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। একারণেই ব্যাংকক হাসপাতালের প্রতি রোগীদের আগ্রহ একটু বেশি। থাইল্যান্ডে একমাত্র বাংলাদেশি মেডিকেল প্র্যাক্টিসনার ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শক্তি রঞ্জন পাল। তিনি ৩৫ বছর চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। প্রথম ২০ বছর জাতিসংঘের অধীনে বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। এরপর তিনি ২০০১ সালে জাতিসংঘ থেকে আবসর নিয়ে ব্যাংকক হসপিটালে যোগ দেন।
অর্থসংবাদ: থাইল্যান্ডের বিখ্যাাত হসপিটাল বামরুনগ্রাদ এর সঙ্গে ব্যাংকক হসপিটালের কোন সম্পর্ক রয়েছে?
ডা. সেন: অনেকেই জানে না যে বামরুনগ্রাদ এর মালিকানার ৪০ শতাংশ রয়েছে ব্যাংকক হসপিটালের। যদিও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা মানেই বামরুনগ্রাদ- এ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছেন বাংলাদেশিরা। অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, মেশিনারিজ, টেস্ট, অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্সিং সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্যাংকক হসপিটালে ক্রমেই বাড়ছে বাংলাদেশি রোগী। অন্য হসপিটাল থেকে খরচও এখানে কিছুটা কম। তাছাড়া এখানকার নার্সিং সেবার কোনো তুলনা হয় না।
অর্থসংবাদ: আপনাদের পরামর্শ নিয়ে গেলে রোগীদের কি সুবিধা? কোন ফি দিতে হয়? আপনাদের কি লাভ?
ডা. সেন: বাংলাদেশ অফিসে রোগী আসলে ব্যাংকক হসপিটালের সব সেবা সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাবে। রোগী সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ পাবে। রোগীর সমস্যা শুনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে কন্সালটেন্সির ব্যবস্থা করে থাকি। এর ফলে রোগীর হেল্থ প্রোফাইল তৈরী করা হয়ে যাবে। ফলে কতদিন থাকতে হবে, কত টাকা খরচ হতে পারে সব বিষয়ে রোগীর বিস্তারিত ধারনা থাকবে। অর্থাৎ রোগীর লাভ হবে সঠিক পরামর্শ পাবে, সঠিক সেবা পাবে এবং রোগীর অর্থ বাচবে। এছাড়াও রোগীর বাজেট অনুযায়ী হোটেল ঠিক করে দেওয়া, পিকআপ ব্যবস্থা, ভিসা প্রাপ্তিতে সহযোগীতা সহ টিকেটিংয়ে আমরা সহযোগীতা দিয়ে থাকি। বাংলাদেশ অফিসকে কোন ফি দিতে হয় না। কারন বাংলাদেশ অফিস সরাসরি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হসপিটালের প্রধান অফিসের তত্তাবধানে পরিচালিত। সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংকক হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে অফিস খুলেছে। ১৪ বছর যাবত বাংলাদেশ অফিস মানুষকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দিন দিন বাংলাদেশীদের চিকিৎসা সেবা নিতে ব্যাংকক হসপিটালের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। বাংলাদেশে আমাদের তিনটি অফিস রয়েছে । ধানমন্ডি, বনানী ও চট্টগ্রাম।
ব্যাংকক হসপিটালের আরও তথ্য-সেবার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: ধানমন্ডি অফিস: ০১৯৫১১১১৮০৫, বনানী অফিস: ০১৯৫১১১১৮০১ ও চট্টগ্রাম অফিস: ০১৮৪১২৪৬২৪৬ নম্বরে।