সর্বোপরি ব্যবস্থাপনা সক্ষমতার সম্প্রসারণ করতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত ‘কভিড-১৯ এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন আলোচকরা।
গতকাল বেলা ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ জুমের মাধ্যমে আয়োজিত এ ওয়েবিনার পরিচালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান।
আলোচনায় যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্যবিদদের নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ গঠিত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর ড. রুমানা হক। ওয়েবিনারটিতে একই সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের একাডেমিশিয়ান, গবেষক, সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
আলোচনার শুরুতেই ড. সেলিম রায়হান কয়েকটি উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন এবং অন্য কিছু দেশের সঙ্গে তুলনা করে দেখান। সেখানে তিনি জানান, বাংলাদেশের এক হাজার জনের জন্য মাথাপিছু হসপিটাল বেড আছে দশমিক ৮, যেখানে শ্রীলংকায় এটি ৩ দশমিক ৬, মালয়েশিয়ায় ১ দশমিক ৯ এবং থাইল্যান্ডে ২ দশমিক ১। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকার জিডিপির মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয় করে, যেখানে শ্রীলংকায় এটি ১ দশমিক ৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডে ৩ শতাংশ। বাংলাদেশে একজন ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যসেবাজনিত ব্যয়ের ৭৪ শতাংশ নিজের বহন করতে হয়, অন্যদিকে শ্রীলংকায় এটি ৫০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় এটি ৩৮ শতাংশ ও থাইল্যান্ডে ১১ শতাংশ।
কভিড-১৯ মোকাবেলায় সময় পাওয়া সত্ত্বেও ঠিকমতো প্রস্তুতি নেয়া যায়নি মন্তব্য করে ড. রুমানা হক তার আলোচনায় বলেন, মহামারী মোকাবেলা পরিকল্পনায় দেরি হয়েছে এবং এটির ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতার অভাব স্পষ্ট।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন জনমিতিক লভ্যাংশের সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন বাংলাদেশে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, তখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়বে। ফলে এখন থেকেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো দরকার। এক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন অংশকে এগিয়ে আসতে হবে।
ড. মোহাম্মদ আবদুস সবুর বলেন, উন্নয়ন-সহযোগী সংগঠনগুলো থেকে মহামারী মোকাবেলায় সহায়তা দ্রুত এলেও সেটি ব্যবহারে দেরি হচ্ছে। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে জবাবদিহির অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত সরকারি স্বাস্থ্য খাতের প্রায় দ্বিগুণ। ১৯৮২ সালের মেডিকেল প্র্যাকটিস প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স বর্তমানে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হালনাগাদ নয়। নীতিনির্ধারকরা অবকাঠামো নির্মাণে উৎসাহী হলেও এই মেডিকেল অবকাঠামো পরিচালনায় দক্ষ জনবল তৈরির জন্য তেমন কিছু করছেন না।
ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ার পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সবচেয়ে বড় কারণ। তিনি বলেন, পরিকল্পনা করা হয় ‘টেবিল টক’-এর ওপর ভিত্তি করে। তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নয়। পুরো পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।