পুঁজিবাজারে বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড এক্সপোজার লিমিটের বাহিরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে চিঠিতে আশা প্রকাশ করেছে বিএমবিএ।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছরে তেমন উন্নতি হয়নি। জিডিপির তুলনায় আমাদের বাজারের আকার এখনও খুবই ছোট। এছাড়া বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের সুযোগও আমাদের বাজারে খুবই নগণ্য।
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে এবং পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও বন্ডের বিষয় বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএমবিএ।
প্রস্তাবগুলো হলো:
১. মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো পেশাগতভাবে পরিচালিত হয় এবং মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। কারণ মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূল্যের ওঠানামা স্টকের তুলনায় যথেষ্ট কম। যেসব বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের জ্ঞান কম মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো তাদের জন্য উপযুক্ত। আমরা যদি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে চাই তাহলে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিনিয়োগের প্রচার করতে হবে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অংশগ্রহণের প্রবাহ অন্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অনেক কম (মার্কেট ক্যাপের শতাংশ হিসাবে এইউএম: ৩ শতাংশের কাছাকাছি)। ভারতের মিউচ্যুয়াল ফান্ড শিল্পের সামগ্রিক আকার ২০১২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে ৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ ভারতীয়দের পরিবারের সঞ্চয়ের প্রায় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। যদি আমরা আমাদের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক তহবিলের প্রবাহকেও বাড়াতে পারি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অংশগ্রহণে বাজার আরও যুক্তিসঙ্গতভাবে কাজ করবে। বাজারের অস্থিরতা হ্রাস পাবে এবং খুচরা বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত উপকৃত হবে।
৩. অন্যদিকে, বন্ডগুলে নির্দিষ্ট আয় প্রদান করে। যারা ঝুঁকি নিতে চায়না তাদের জন্য এই পণ্যগুলো উপযুক্ত। এছাড়াও, কোম্পানিগুলো বন্ড ইস্যু করে মূলধন বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদী তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। সুতরাং, যদি আমরা বন্ড জনপ্রিয় করতে পারি, তাহলে বিনিয়োগকারী এবং ইস্যুকারী উভয়ই অনেক বেশি হবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের সুযোগ কম রয়েছে কারণ আমাদের বাজারে এখনও ইক্যুইটি আধিপত্য রয়েছে। বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে খুব কম বন্ড বা অন্যান্য বিনিয়োগ পণ্য রয়েছে। বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন বাজারের আকার বৃদ্ধি এবং বাজারে আরও তহবিল আনবে। বাজারের আকার এবং বিনিয়োগের বৈচিত্র্যের সুযোগ বাড়াতে আমাদের বিনিয়োগকারীদের জন্য বন্ডের মতো আরও বিনিয়োগ পণ্য আনতে হবে।
৪. বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংগ্রহ করে। অন্যদিকে, ব্যাঙ্কগুলো দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদী আমানত নেয়। ফলে ব্যাঙ্কগুলোতে নগদ প্রবাহের অমিল তৈরি হয়। সুতরাং, যদি আমরা বন্ডগুলোকে প্রচার করতে পারি তাহলে উদ্যোক্তারা তাদের প্রকল্পে অর্থায়নের নতুন যায়গা পাবেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যাঙ্ক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ধারা ২৬এ অনুযায়ী, শেয়ার, কর্পোরেট বন্ড, ডিভেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং পুঁজিবাজারে ব্যাঙ্কগুলোর সমস্ত ধরণের বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের এক্সপোজারের অন্তর্ভুক্ত৷ বিভিন্ন ব্যাংক অতীতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ডে বিনিয়োগ করতো। তবে এখন সেই প্রতিষ্ঠানগুলো মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায় না। তাই ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ডে বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটের মধ্যে থাকায় পুঁজিবাজারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে এবং বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে বন্ড এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ড ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগে এক্সপোজার লিমিট বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।