বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘২০২০-২১ বাজেট ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সামাজিক সুরক্ষা খাতের বাজেট পর্যালোচনা করে এই অভিমত জানান আলোচকরা।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ আলোচনায় পিকেএসএফ ও খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা যোগ দেন।
আলোচনাপত্র পাঠ ও সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী।
আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বাজেটের ১৪.২১ শতাংশ এবং জিডিপির ২.৫৮ শতাংশ। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ বাবদে ৬৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।
বর্তমানে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার কথা বলছে সরকার।
চলতি অর্থ বছরে চা শ্রমিক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা, হিজড়া, বেদে ও অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতাভোগীদের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ও প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবনা এনেছেন অর্থমন্ত্রী।
এ বাজেট বিশ্লেষণ করে নাজনীন আহমেদ বলেন, “এ বছর সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১৪ হাজার কোটি টাকার বাড়তি বরাদ্দে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার, প্রবাসী আয়ের অংশ, বেসরকারি ব্যাংকের করোনাকালের সুদের অংশ ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
“এগুলোকে সুরক্ষা বলা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। সামাজিক নিরাপত্তার উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী সাহায্য দেয়া হয়, কিন্তু কর্মসূত্রে তিনি অন্য জায়গায় থাকতে পারেন। ফলে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। এ প্রক্রিয়াটি সংশোধন করা দরকার।”
সায়মা হক বিদিশা বলেন, “শহরের বস্তিবাসী দরিদ্রদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল বাজেটে। গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য ১০০ কোটি টাকা যে বরাদ্দ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে তা খুবই অপ্রতুল এবং এখানেও নগর দারিদ্র্য উপেক্ষিত।”
জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যক্রমগুলো যত দ্রুত সম্ভব ডিজিটালাইজেশন করার পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতাসাধনের পরামর্শও দেন তিনি।
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাজেটের শিরোনামে মানুষ বাঁচানোর কথা বলা হলেও সামগ্রিকভাবে বরাবরের মতো প্রবৃদ্ধিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
“জীবন ও জীবিকার বিষয়টি এখন মুখোমুখি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন খাদ্য সাহায্য চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু আরো কিছুদিন তা অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যার প্রতিফলন বাজেটে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।”
এ কে এনামুল হক বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক সতর্ক হয়ে সরকারকে ব্যয় করতে হবে। অতি দরিদ্র মানুষ করোনার কারণে দ্বিগুণ হলেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন বাজেটে দেখা যাচ্ছে না। যদিও প্রতি বাজেটের বরাদ্দই খরচ হয় মূলত অর্থ-বছরের ছয় মাস পর থেকে।
“শুধুমাত্র ভাতা দিয়ে করোনাকালে দরিদ্র মানুষকে রক্ষা করা যাবে না। সেক্ষেত্রে তাদের সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত আচরণগত পরিবর্তন করতে হবে। তাহলেই মানুষ আস্তে আস্তে কাজে ফিরতে পারবে। এসব কাজে তাই সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এনজিওরা এক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। বাজেটে এর দিক-নির্দেশনা থাকতে পারত।”
আলোচনাপত্র উপস্থাপনকালে মহসিন আলী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে যে ৭টি কর্মসূচি নগরের দরিদ্রদের জন্য পরিচালিত হয়, সেখানে বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশ।
“এ খাতে মোট বরাদ্দের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর ও পারিবারিক অবসর ভাতা, চাকুরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের জন্য অনুদান, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা এই উপখাতসমুহকে পৃথক না করায় কর্মসূচির জন্য নীট বরাদ্দ ও তার কার্যক্রম সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় না।”