শুনানিতে আদালত বলেন, ‘আমরা চাই, আপনারা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু করেন। যদিও আপনারা দেশের স্বার্থেই কাজ করে চলেছেন। তবে আমরা চাই, দেশটা ভালো থাকুক। দেশ ভালো থাকলে দেশের মানুষও ভালো থাকবে। সবাই ভালো থাকার জন্যই দেশটা স্বাধীন করা হয়েছে।’
সুইস ব্যাংকে অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে দেওয়া প্রতিবেদন নাম-পদবি ছাড়া যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তা জমা দেওয়ায় বুধবার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম ও বিচারপতি খিজির হয়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করে আদেশ দেন।
এসময় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মাসুদ বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি। দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এর আগে সকালে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের বিষয়ে দেওয়া প্রতিবেদন নাম-পদবি ছাড়া জমা দেওয়ায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মাসুদ বিশ্বাস হাইকোর্টের তলবে হাজির হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এসময় আদালত তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘একেবারে দায়সারাভাবে প্রতিবেদনটি আদালতে জমা দিয়েছেন। নাম-পদবি ছাড়া একটা প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে দিয়ে দিলেন, এটা কি ক্যালাসনেস না? আপনি আজ দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইছেন। আমরা এবার ক্ষমা করছি। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আপনাদের সতর্ক হতে হবে।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা দেশেই ফিরে আসবে। দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকবো। ভালো থাকার জন্যই দেশটা স্বাধীন হয়েছে।’ এসময় বিচারক বলেন, ‘আমরা সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করলে এ দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হবেই।’
হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ এ দেশ থেকে কমাতেই হবে। আমরা সিঙ্গাপুর থেকে ভালো হতে চাই। যদিও এখন আমরা ভালো আছি।’ সিঙ্গাপুর আমাদের কাছাকাছি সময়ে স্বাধীন হয়েছে যোগ করেন বিচারক।
একপর্যায়ে হাইকোর্ট অর্থপাচার প্রতিরোধে সেল গঠন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে অর্থ জমাকারী বাংলাদেশিদের তথ্য চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ২৬ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে বিএফআইইউ প্রধানের প্রতি নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশের পরেও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সুইস ব্যাংকে অর্থপাচার সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য দাখিল করায় মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) হাইকোর্টের একই বেঞ্চ মাসুদ বিশ্বাসকে তলব করে। তাকে বুধবার (৩১ আগস্ট) বেলা ১১টায় হাইকোর্টে উপস্থিত হতে আদেশ দেন।
সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমাকারী বাংলাদেশিদের বিষয়ে সরকার নির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য চায়নি বলে সম্প্রতি দেশটির রাষ্ট্রদূত বক্তব্য দেন। তার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর পক্ষ থেকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে পাওয়া তথ্য প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হয়। জমা দেওয়া কাগজপত্রে কারও নাম, সিল ও পদবি উল্লেখ না থাকায় বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করা হয়।
মঙ্গলবা রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর তথ্য আদালতে তুলে ধরেন। এরপর অর্থ নিয়ে কাজ করে আসা বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করেন আদালত।
গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড বলেছিলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত সুইস ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি।
তিনি আরও বলেন, গত বছর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। তবে উভয় দেশের সম্মতিতে ব্যাংকিং তথ্য লেনদেন হতে পারে এবং সেটা সম্ভবও। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।