১১টি প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষকদের জরিপে দেখা গেছে, গত প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ, যা গত বছরের ৬ দশমিক ১ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। তবে বিশ্বের অন্য প্রধান অর্থনীতিগুলো যেখানে এখনো মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি, সেখানে চীনের এ প্রবৃদ্ধি দেশটির জন্য ইতিবাচক।
চীনের মধ্যাঞ্চলীয় শিল্পায়িত প্রদেশ হুবেইয়ে প্রথম দেখা দেয়া নভেল করোনাভাইরাসের হামলায় বিশ্বজুড়ে হাজারো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চাকরি হারিয়েছেন লাখো কর্মী।
তবে বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস চলতি বছরে প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে কেবল চীনই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির দেখা পাবে। যেহেতু চীনই কভিড-১৯-এর ধাক্কা প্রথম খেয়েছে, সেহেতু ঘুরে দাঁড়ানোর বেলায়ও প্রথমে রয়েছে দেশটি।
এএফপি পরিচালিত অর্থনীতিবিদদের জরিপে চলতি বছরে চীনে ১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বিপরীতে বৈশ্বিক সংকোচনের পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)।
এপ্রিল থেকে জুনের বিস্তারিত প্রবৃদ্ধি উপাত্ত আগামী বৃহস্পতিবার প্রকাশ করবে সরকার।
ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক মাসের জন্য পুরো দেশে শাটডাউন কার্যকর করেছিল চীন। কারখানা কার্যক্রম বন্ধ করে কর্মীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং সব ধরনের ভ্রমণ সীমিত করে দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু মহামারী বড় আকারে নিয়ন্ত্রণে আনার পর চীনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম নতুন করে শুরু হয়েছে। গত এপ্রিলে হুবেই প্রদেশ এবং তার রাজধানী উহানেও লকডাউনের শেষ টানা হয়। মুডি’স অ্যানালিটিকসের বিশ্লেষক শিউ শিয়াওচুন বলেন, গণহারে পরীক্ষা এবং রাজধানীতে সুনির্দিষ্ট লকডাউন কার্যকরে অর্থনৈতিক বিঘ্ন সীমিত আকারের ছিল। এতে বিনিয়োগকারীদের এ আস্থা দিয়েছে যে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ ঘটলেও চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে প্রান্তিক উপাত্ত রাখার পর এটি ছিল সর্বনিম্ন প্রান্তিক প্রবৃদ্ধি।
চীন তাদের বাজেট ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে এবং কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করেছে, যাতে ভাইরাস মহামারীতে ধাক্কা খাওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ টমি অউ আশা করছেন, দ্বিতীয় প্রান্তিক পরবর্তীতেও ঘুরে দাঁড়াতে থাকবে চীনের অর্থনীতি। সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা না থাকায় কারখানাগুলো পুরোদমে সচল হতে থাকবে।
ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের চীন গবেষণার প্রধান জেন মা বলেন, চীনের আরোগ্যলাভের কারণ এটি অধিক পরিমাণে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি।
কভিড-১৯-এর ধাক্কা থেকে সেবা খাতের চেয়ে শিল্প খাত দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারে বলে মনে করেন মা।
তবে ভবিষ্যতে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, সেদিকেও দৃষ্টি দেয়ার কথা বলছেন মুডি’সের বিশ্লেষক শিউ। তিনি বলেন, বৈদেশিক চাহিদায় শ্লথগতিতে চীনের আরোগ্যলাভের এ প্রচেষ্টা কীভাবে বিঘ্নিত হয় তা দেখার বিষয়।
চীনের প্রধান বাণিজ্য অংশীদাররা কভিড-১৯-এ মারাত্মকভাবে ধুঁকতে থাকায় বৈদেশিক চাহিদায় বেশ শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে। এজন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে মনোযোগ দেয়ার কথা বলছে সরকার।
অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা ও বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা এবং হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইন, যা নতুন করে বাণিজ্য উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন শিউ।
এইচএসবিসির চীনবিষয়ক মুখ্য অর্থনীতিবিদ কিউ হংবিন মনে করছেন অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার প্রক্রিয়াটা অসম হবে। অবকাঠামো ও অন্যান্য সরকারি বিনিয়োগ চাঙ্গা হলেও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কম থাকবে। ক্ষতিগ্রস্ত কর্মী ও তাদের পরিবারের সহায়তায় বড় আকারের আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা না করলে ভোক্তাব্যয় চাঙ্গা হবে না, যা চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান কারিগর। এতে অর্থনৈতিক আরোগ্যলাভের বিষয়টি বড় আকারে ধাক্কা খাবে বলে মনে করেন কিউ। সুত্র: এএফপি।