রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে চিংড়ি রফতানি হয় ৩৩ কোটি ১৪ লাখ ডলারের। চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথমার্ধে রফতানি হয় ২১ কোটি ৭২ লাখ ডলার মূল্যের চিংড়ি, যা লক্ষ্যের তুলনায় ২৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি হলেও আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ কম এবং পাঁচ বছর আগের তুলনায় ৩৪ শতাংশ কম।
ইপিবি ও বিএফএফইএর তথ্যমতে, গত পাঁচ বছর ধরে চিংড়ি রফতানি কমতির দিকে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ২৭৮ টন চিংড়ি রফতানির বিপরীতে আসে ৫১ কোটি ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪০ হাজার ২৭৬ হাজার টন চিংড়ি রফতানি করে আসে ৪৫ কোটি ডলার। আয় কমার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে পরের অর্থবছরেও। ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৩৯ হাজার ৭০৬ টন চিংড়ি রফতানি করে আসে ৪৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। ওই বছর ৪৫ কোটি ডলারের লক্ষ্যের বিপরীতে ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ কম রফতানি হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি হয় ৩৬ কোটি ১১ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যের তুলনায় ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ ও আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম।
চিংড়ি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতে রফতানি কমার অন্যতম কারণ বিশ্ববাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পেরে না ওঠা। মূলত ওই সব দেশ স্বল্প মূল্যের চিংড়ি উৎপাদন করে, যা এ দেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশের চাষীরা মূলত গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষ করেন। এসব চিংড়ি মানে উন্নত হলেও দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভারত, একুয়েডর ও ভিয়েতনামে ভেনামি জাতের চিংড়ির ব্যাপক চাষ হচ্ছে। ভেনামি চাষে উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হয়। ফলে কম মূল্যে সরবরাহ করার কারণে বাজার দখলে ভেনামির সঙ্গে পেরে উঠছেন না স্থানীয় গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষীরা। ভেনামি চিংড়ি বাংলাদেশে এখনো উৎপাদন হয় না। তাই কম উৎপাদনশীল গলদা ও বাগদা চিংড়ি দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন বলছেন চিংড়ি রফতানিকারকরা। বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ি সরবরাহ বৃদ্ধি বাংলাদেশের চিংড়ির দাম ও চাহিদা দুটোই কমিয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছে।
বৈশ্বিক বাজার ও ব্যবসা সংক্রান্ত গবেষণায় শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আইএমআরসির মতে, ২০১৮ সালে বিশ্বে চিংড়ির বাজার ছিল ৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন টনের, যার বাজারমূল্য ১৯ বিলিয়ন ডলার। সংস্থাটির মতে, এ খাতে বৈশ্বির প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ হারে বেড়ে ২০২৪ সাল নাগাদ চিংড়ি খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন টনে।
রফতানি সংক্রান্ত তথ্য, সাম্প্রতিক প্রবণতা ও সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ওয়ার্ল্ডস টপ এক্সপোর্টের (ডব্লিউটিই) মতে, ২০১৮ সালে চিংড়ির বৈশ্বিক বাজারের ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ভারত। তারপর ১৭ ও ১০ দশমিক ৮ শতাংশ বাজার নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে একুয়েডর ও ভিয়েতনাম। আর বিশ্ববাজারের ২ দশমিক ২ শতাংশ দখলে নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম পড়ে গেলেও দেশের বাজারে কয়েক বছর ধরেই চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে চড়া মূল্যে। স্থানীয় বাজারে দাম বেশি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে কেনা দামেই চিংড়ি রফতানি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। যে কারণে নগদ সহায়তার ওপর নির্ভর করে হচ্ছে এ খাতের রফতানি।
বিএফএফইএর সভাপতি কাজী বেলায়েত বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে ভেনামি চিংড়ি কেনাবেচা হয়। ভেনামির চাহিদা বাড়ায় আমাদের চিংড়ি রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই স্থানীয় রফতানিকারকরা কম দামে চিংড়ি রফতানি করতে বাধ্য হন। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো ভেনামি রফতানি করে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে।