শেয়ারবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুডস প্রোডাক্টস লিমিটেড এক যুগ ধরে বঞ্চিত করছে বিনিয়োগকারীদের। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় আগে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি। তবে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। গণস্বাস্থ্যনগর হাসপাতালের ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্যাহ চৌধুরীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি টিউলিপ ডেইরি। গণস্বাস্থ্যনগর হাসপতালের ঠিকানা কোম্পানিটির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে এমন তথ্য দিয়েছে ডিএসই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার এবং আলোচিত ডা. জাফরউল্যাহ চৌধুরীর গণস্বাস্থ্যনগর হাসপতালের ধানমণ্ডি ভবনের ঠিকানায় দীর্ঘদিন টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুডস প্রোডাক্টস লিমিটেডের কার্যালয় ছিল বলে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্যনগর হাসপাতালের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি সাভারের গণস্বাস্থ্যনগর হাসপাতালের ঠিকানায় কোম্পানিটির কার্যালয় স্থানান্তর করা হয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সন্ধ্যা রায়।
এ বিষয়ে টিউলিপ ডেইরির চেয়ারম্যান সন্ধ্যা রায় অর্থসংবাদকে বলেন, কোম্পানির কার্যালয় এখন সাভারে। তবে কোম্পানি প্রায় ১২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হওয়ার আগে টিউলিপ ডেইরি বিনিয়োগকারীদের কিছু দিয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে সামান্য কিছু হয়তো দিয়েছে, আমি সঠিক বলতে পারছি না। এক প্রশ্নের জবাবে সন্ধ্যা রায় বলেন, শেয়ারবাজারে থেকে বের হয়ে যাবে টিউলিপ ডেইরি। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুডস প্রোডাক্টসের একজন কর্মচারী জানান, আগে যে পরিচালনা পর্ষদ ছিল, তারা কোম্পানিতে লুটপাট চালিয়েছে। চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য পদে রদবদল হওয়ার পর কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। টিউলিপ ডেইরির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কোম্পানিটির কার্যক্রম চলছে। তবে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে- এমন দাবি করছেন সেখানকার কর্মচারীরা।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী টিউলিপ ডেইরির মালিকানায় আছেন কি না- এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কোম্পানিটির সরাসরি মালিকানায় না থাকলেও যেহেতু গণস্বাস্থ্যনগর হাসপাতালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিউলিপ ডেইরি, সেহেতু তিনি পরোক্ষভাবে মালিকানায় আছেন।
জানা গেছে, ১৯৯০ সালে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুডস প্রোডাক্টস লিমিটেড। ডা. জাফরউল্যাহ চৌধুরীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ২৮ টাকায় লেনদেন হয়েছিল। সর্বশেষ কবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছিল টিউলিপ ডেইরি, তাঁর কোন হদিস মেলেনি ডিএসইর ওয়েবসাইটে। এমনকি কোম্পানিটির চেয়ারম্যানেরও জানা নেই বিষয়টি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুডস প্রোডাক্টস লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২ লাখ ৩৯ হাজার। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
২০১৮ সালে শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৮২ পয়সা আয় করেছে- এমন তথ্যই জানানো হয়েছে ডিএসইর ওয়েবসাইটে। এ হিসেবে কোম্পানিটি ওই বছর আয় করেছে ৯ লাখ টাকার বেশি। তবে বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দেয়নি টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুডস প্রোডাক্টস। ২০১৮ সালের তথ্য ছাড়া ডিএসইতে কোম্পানিটির আয়ের আর কোন তথ্য নেই।
১৯৯০ সালে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। অথচ কোম্পানিটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৪৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। বাকি ৫০ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুডস প্রোডাক্টসের উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা। কোম্পানিটির প্রায় অর্ধেক শেয়ার ধারণ করা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যুগ যুগ ধরেই বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘদিন বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করা টিউলিপ ডেইরি এখন শেয়ারবাজার থেকে বের হতে চাইছে।