ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য কমাতে প্রত্যক্ষ কর শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। বৈষম্য কমানোর জন্য এটি হবে প্রধান উপায়। এক্ষেত্রে করযোগ্য সব ব্যক্তিকে তাদের প্রযোজ্য কর দিতে হবে। তাহলে জিডিপির অনুপাতে ব্যক্তি আয়কর ১ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এজন্য নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কর অব্যাহতি সুবিধা বাদ দিলে জিডিপির অনুপাতে আরও ২ শতাংশ কর বাড়ানো সম্ভব।
শনিবার বৈষম্য মোকাবেলা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ কর প্রয়োগ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)। র্যাপিড ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিড চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, এনবিআরের সদস্য মাহমুদুর রহমান, ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।
র্যাপিড চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, দেশে ৭৬ লাখ মানুষের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) আছে। কিন্তু এর মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ২৪ লাখ মানুষ ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতি বছর করদাতাদের গড় কর রাজস্বের পরিমাণও কমছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এটি ছিল ২ দশমিক ৪ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১ লাখ টাকায়। এর মধ্যে নামমাত্র মানুষ কর দেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে দিতে পারে সরকার। কারণ বর্তমানে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। এর পরও সবার কাছ থেকে ব্যক্তি আয়কর জিডিপির অনুপাতে ৩ শতাংশের বেশি অর্জন সম্ভব হবে। আবার করপোরেট কর জিডিপির অনুপাতে মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। বর্তমানে ২ লাখ ৭৩ হাজার নিবন্ধিত কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ বা ৩০ হাজারের মতো কোম্পানি কর দেয়। এক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে। আর অনেকের সম্পদ থাকলেও মাত্র ১৫ হাজার সম্পদের সারচার্জ দেয়। এটা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কর জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশ, যা সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর বড় কারণ প্রত্যক্ষ কর অনেক কম। এটা বাড়াতে হবে। বর্তমানে পরোক্ষ কর ৬৫ শতাংশ এবং প্রত্যক্ষ কর ৩৫ শতাংশ। তবে সরকার আগামী দিনে প্রত্যক্ষ কর ৭০ শতাংশ ও পরোক্ষ কর ৩০ শতাংশে আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি সঠিক সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, করের আওতা বাড়ানোর এমন একটি পদ্ধতি আনতে হবে, যা দিয়ে আয় বাড়বে। যেমন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে সোশ্যাল ইন্স্যুরেন্স নাম্বার চালু করলে আয়-ব্যয়সহ করের হিসাব রাখা সহজ হবে। এতে কর আদায় বাড়বে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো উচিত। তবে ৭০ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কারণ এনবিআরের কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। রাজনৈতিক অর্থনীতির কারণে এনবিআর রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে আছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে বড় বাধা রাজনৈতিক অর্থনীতি। কারণ অনেক খাতেই কর অবকাশ সুবিধা দিতে হচ্ছে। বিশেষ কর হার আরোপ করতে হচ্ছে। তাছাড়া সংসদ সদস্যদের অনেকেই ব্যবসায়ী হওয়ায় তারাও কর ছাড়ের সুবিধা নিতে চাইছে। এসব কারণে বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকা কর ছাড় দিতে হচ্ছে। রাজনৈতিক অর্থনীতির স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণেই কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় হচ্ছে না। রাজস্ব আয় বাড়াতে সংস্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে এনবিআরের জোনগুলোকে সংখ্যা দিয়ে নয়, বরং খাতভিত্তিক রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।
অর্থসংবাদ/এনএন