নারী-পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের উপর বিয়েকে হালাল করেছেন। সেই সঙ্গে জেনাকে হারাম করেছেন। পাপাচার থেকে মুক্ত হয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করার জন্য আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের উপর এ বিধান দিয়েছেন। তবে, বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে কিছু বিধান রয়েছে। যে কাউকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ইসলামে কঠোর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
কোরআনুল কারিমে এই সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট ঘোষণা। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন সতীসাধ্বী নারী ও আহলে কিতাবের সতীসাধ্বী নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৫)
তবে এটাও স্মরণ রাখতে হবে যে ইসলাম একটি পৃথক ধর্ম। তাই আত্মীয়তা, ঘনিষ্ঠতা ও সামাজিকতার ক্ষেত্রে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের মধ্যে কিছু পার্থক্য ধরে রাখা হয়েছে। যেমন— আহলে কিতাবের নারীদের বিয়ে করা মুসলমানদের জন্য বৈধ বটে; কিন্তু আহলে কিতাব কোনো পুরুষের সঙ্গে মুসলিম নারীদের বিয়ে বৈধ নয়।
চলুন জেনে নেয়া যাক, যে ২৪ ধরনের নারীকে বিয়ে করা হারাম-
১. আপন মা, বাবা ও দাদা-নানার স্ত্রীরা এবং তাদের কামভাব নিয়ে স্পর্শকৃত নারী। এরূপ ঊর্ধ্বতন সব দাদা-নানার স্ত্রীরা।
২. মেয়ে এবং ছেলে ও মেয়ের ঘরের সব নাতনি।
৩. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় ফুফু।
৪. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় খালা।
৫. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় বোন ও তাদের সন্তানাদি।
৬. সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় ভ্রাতৃকন্যা ও তাদের সন্তানাদি।
৭. দুধমাতা, তার মাতা, দাদি, নানি—এমনিভাবে ওপরের সব নারী।
৮. স্ত্রীর মেয়ে, যদি স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস হয়ে থাকে।
৯. পুত্রবধূ, আপন ছেলের হোক বা দুধছেলের হোক।
১০. আপন শাশুড়ি, দাদিশাশুড়ি, নানিশাশুড়ি এবং ওপরে যারা রয়েছে।
১১. দুই বোন একত্রীকরণ, এমনিভাবে ফুফু ও তার ভাতৃকন্যা, খালা ও তার ভাগ্নিকন্যাকে একসঙ্গে বিয়ের মধ্যে রাখা।
১২. উল্লিখিত রক্ত সম্পর্কের কারণে যারা হারাম হয়েছে, দুধ সম্পর্কের কারণেও তারা সবাই হারাম হয়।
১৩. যে মেয়ে অপরের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে। এছাড়াও অন্য সব নারীকে বিয়ে করা হালাল। (দেখুন : সুরা নিসা, আয়াত : ২৩-২৪)
বংশগত সম্পর্কে যারা হারাম
১৪. আপন জননীদের বিয়ে করা হারাম। এখানে দাদি, নানি সবার ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন: টানা তিন জুমা না পড়লে যে গুনাহ হবে
১৫. স্বীয় ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করা হারাম। এখানে পৌত্রী, প্রপৌত্রী, দৌহিত্রী, প্রদৌহিত্রী তাদেরও বিয়ে করা হারাম।
১৬. সহোদরা ভগ্নিকে বিয়ে করা হারাম। এমনইভাবে বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী ভগ্নিকেও বিয়ে করা হারাম।
১৭. পিতার সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী বোনকে (ফুফুকে) বিয়ে করা হারাম।
১৮. আপন জননীর সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী বোনকে (খালা) বিবাহ করা হারাম।
১৯. ভ্রাতুষ্পুত্রীর সঙ্গেও বিয়ে হারাম, আপন হোক, বৈমাত্রীয় হোক।
২০. বোনের কন্যা, অর্থাৎ ভাগ্নিকে বিয়ে করা হারাম। চাই সে বোন সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী যেকোনো ধরনের বোনই হোক না কেন, তাদের কন্যাদের বিবাহ করা ভাইয়ের জন্য বৈধ নয়।
আরও পড়ুন: শীতকালে যে ৫ আমল সহজেই করা যায়
বৈবাহিক সম্পর্কে যারা হারাম
২১. স্ত্রীদের মাতাগণ (শাশুড়ি) স্বামীর জন্য হারাম। এতে স্ত্রীদের নানি, দাদি সবার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য।
২২. নিজ স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহের পর সহবাস করার শর্তে ওই স্ত্রীর অন্য স্বামীর ঔরসজাত কন্যাকে বিবাহ করা হারাম।
২৩. পুত্রবধূকে বিয়ে করা হারাম। পুত্র শব্দের ব্যাপকতার কারণে পৌত্র ও দৌহিত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করা যাবে না।
২৪. দুই বোনকে বিবাহের মাধ্যমে একত্র করা অবৈধ, সহোদর বোন হোক কিংবা বৈমাত্রেয়ী বা বৈপিত্রেয়ী হোক, বংশের দিক থেকে হোক বা দুধের দিক থেকে হোক- এ বিধান সবার জন্য প্রযোজ্য। তবে এক বোনের চূড়ান্ত তালাক ও ইদ্দত পালনের পর কিংবা মৃত্যু হলে অন্য বোনকে বিবাহ করা জায়েজ।