সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৫২০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছিল ৪৬২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বাকি ৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে মেটানোর কথা ছিল।
প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় কমে দাঁড়ায় ৩০০ কোটি ৭২ লাখ টাকা, বিশ্বব্যাংকের ঋণ কমে দাঁড়ায় ২৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় আরও কমে দাঁড়ায় ২৫৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ কমে দাঁড়াচ্ছে ২১৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ফলে বিশ্বব্যাংকের মোট ঋণ কমছে ২৪৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
প্রকল্পের ব্যয় কমানোর এ ধরনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বিএমডি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পটি মোট ৫২০ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেক সভায় অনুমোদন হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কতিপয় কাজের ব্যয় পুনর্নির্ধারণ/নতুন কাজ সংযোজন এবং বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর ৬ মাস বৃদ্ধির প্রয়োজন হওয়ায় প্রকল্পটি ১ম সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। প্রকল্পের ব্যয় ৩০০ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত নির্ধারণ করে ১ম সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন করেন।
এবার প্রকল্পের ব্যয় আরও ৪৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা কমিয়ে ২৫৭ কোটি ৬ লাখ টাকা নির্ধারণ এবং মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
বিএমডি’র প্রস্তাবনায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করবে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সত্যজিত কর্মকারকে বদলি করে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব করা হয়েছে। নতুন সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। এখন নতুন করে পিইসি সভার তারিখ দেওয়া হবে।
এবিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের উপ-প্রধান মোছা. নাদিরা আখতার জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পের কিছু সংশোধনী প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিএমডি। বিএমডি’র প্রস্তাবনা নিয়ে পিইসি সভা করা হবে। আমরা একবার পিইসি সভার তারিখ দিয়েছিলাম। কিন্তু সদস্য (সচিব) পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে আবারও তারিখ দেওয়া হবে।
প্রকল্প সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পে কিছু কাজের পরিবর্তন হবে। প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের ঋণও কমবে। এছাড়া প্রকল্পের কিছু কাজের পরিধিও বাড়বে। করোনার কারণে প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হয়। এসব কারণে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়বে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ
প্রকল্পে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্যাকেজ ক্রয়ের সংস্থান রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অধিকাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সময়মতো পণ্য-মালামাল সরবরাহ করতে পারেনি। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এর সঙ্গে জড়িত বিদেশি প্রকৌশলী এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞরা সময়মতো বাংলাদেশে আসতে না পারায় পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্ণিত প্যাকেজের পণ্য স্থাপন এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের অনাপত্তি না পাওয়ায় প্যাকেজ শুরু না হওয়া
প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট বিশ্বব্যাংক থেকে ডাটা শেয়ারিং সফটওয়্যার টু শেয়ার ইনফো বিটুইন বিএমডি অ্যান্ড স্টেকহোল্ডার, ডেভেলপমেন্ট অব নিউমেরিক্যাল মডেল গাইডেন্স অ্যান্ড প্রিপারেশন অব প্রেডিকশন ইউজিং, ডেভেলপ ন্যাশনাল ফ্রেমওয়ার্ক অব ক্লাইমেট সার্ভিস অ্যান্ড কনসালটেন্সি ও রিসার্চ প্রোগ্রাম প্যাকেজসমূহের অনাপত্তি পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের অবশ্লিষ্ট সময়ে এসব প্যাকেজ কেনা এবং তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ কারণে প্যাকেজগুলো প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মূল কার্যক্রম: সারাদেশে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কসহ মোট ২০০টি উপজেলায় স্বয়ংক্রিয় কৃষি আবহাওয়া যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সেবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় প্রান্তিক কৃষকদের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
সারাদেশে বিদ্যমান আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩৫টি সনাতন পর্যবেক্ষণাগারকে স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে রূপান্তর করা হবে। এসব পর্যবেক্ষণাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে আদান-প্রদান করা। চারটি বিভাগীয় (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা) শহরে ওয়াসা অফিস চত্বরে ৬৫টি স্বয়ংক্রিয় বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে নগর বন্যা মোকাবিলার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হবে।
তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট) ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী অত্যাধুনিক আবহাওয়া যন্ত্রপাতি স্থাপন করা। এর মাধ্যমে নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যউপাত্ত সারাবিশ্বে আদান-প্রদানের জন্য গ্লোবাল টেলিকমিউনিকেশন সুইচিং সিস্টেমের আধুনিকায়ন করা হবে।
বেলুনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়ার উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক মানের ১১টি পোর্টেবল হাইড্রোজেন গ্যাস জেনারেটর স্থাপন করা। অধিদপ্তরের প্রতিটি পর্যবেক্ষণাগারে আইসিটি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে।
অধিদপ্তরের ইন্টারনেট ও লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার উন্নয়নসহ মেট্রোলজিক্যাল ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্টেশন জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দক্ষতা বৃদ্ধি করে অধিকতর নির্ভুল ও আগাম পূর্বাভাস এবং সতর্কবার্তা দেওয়ার মাধ্যমে আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো। সেই সঙ্গে অগ্রাধিকার খাত কৃষি, বিমান চলাচল, পানিসম্পদ পরিকল্পনা, নবায়নযোগ্য শক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া, পর্যটন, পরিবহন এবং সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীজনদের জন্য জলবায়ু সেবার মান উন্নত করা এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। আর্কাইভ সিস্টেম অ্যান্ড ফোরকাস্ট প্রোডাকশন সিস্টেম, ক্লাইমেট ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপন করা প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও বরিশাল শহরের আবহাওয়া দপ্তরসমূহকে ওয়ার্কস্টেশন ও আইসিটি যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মচারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। আবহাওয়া তথ্য, উপাত্ত, সতর্কবার্তা, বুলেটিন, প্রতিবেদন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটিতে প্রেরণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও মোবাইল অ্যাপস স্থাপন করা।