টানা শৈত্যপ্রবাহের শীতে বিপর্যস্ত সীমান্ত জেলার সাধারণ মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে শহরের জাতীয় মহাসড়ক ও গ্রামের সড়কগুলোতে যানবাহনে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
যা গতকাল থেকে বেড়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সোমবার ভোর থেকে বেলা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ঢাকা রয়েছে এ জেলা। কুয়াশার কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
ভোর থেকে ঘন কুয়াশা আচ্ছন্ন। কুয়াশার সাথে হিমেল বাতাস থাকায় অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। শীত দুর্ভোগে জীবনযাপন করছে নানান শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরীব অসহায় মানুষ। চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিক, ভ্যান চালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহনের চালকরা পড়েছেন বিপাকে। শীতের কারণে তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। দারিদ্রতা ভর করছে।
কুয়াশা ঢাকা সকালে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, প্রয়োজনে অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও পরিবারের কথা চিন্তা করে কাজে বেড়িয়ে পড়েছেন দিনমজুর, পাথর ও চা শ্রমিক, ভ্যান চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। জীবিকার তাগিদেই তারা
কেউ নদীতে পাথর তুলতে, কেউ চা-বাগানে, কেউ পাথর ভাংতে আবার গেরস্থের বাড়িতে দিন হাজিরার কাজে ও বেসরকারি সংস্থা এনজিও কর্মীদের কাজে যেতে দেখা গেছে। শীতের দুর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারেই কম বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিক ও দিনমজুর মানুষগুলো জানান, ঠান্ডার কারণে তারা ঠিকমত কাজ করতে পারছেন না। কাজ না করলে জীবনও চলছে না। তাই তারা শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেড়িয়েছেন। দিনশেষে কাজ করে যা মজুরি আসবে সেটা দিয়ে বাজার-সওদা করে পরিবারের মুখে আহার জুটাবেন।
কয়েকজন এনজিও কর্মী জানান, খুব ঠান্ডা। আর ঘন কুয়াশার কারণে মোটরসাইকেল চালানো অত্যন্ত কষ্টকর। কিন্তু চাকরি করার কারণে কষ্ট হলেও ফিল্ডে বের হতে হয়েছে।
বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরাও। তারা জানান, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কারণে ক্ষেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। অনেক দেরিতে মাঠে যেতে হচ্ছে। এখন বোরো মৌসুম, ভুট্টা, মরিচ, গমসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করতে হচ্ছে। শীতের কারণে বেলা করে ক্ষেতে গিয়ে কাজ এগুচ্ছে না বলে জানান তারা।
শীতের কারণে পড়ালেখা স্থবির হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও। স্কুল শিক্ষার্থীরা জানায়, শীতের কারণে তাদের পড়ালেখা করতে কষ্ট হচ্ছে। সন্ধ্যায় রাত বরফ হয়ে উঠে। ভোরে কুয়াশা আর কনকনে শীতে পড়তে-লিখতে হাতপা অবশ হয়ে আসে। স্কুল-কলেজে যেতে কষ্ট হচ্ছে।
শীত প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। জেলা সদর ও উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলায় গতকালের তুলনায় আজ এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। আজ সোমবার সকাল ৯টায় রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকাল রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশার কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। দুদিন আগে গত শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। জেলার ওপর দিয়ে এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহিত হচ্ছে।