১৯৯০-২০০০ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের বার মজুদ ছিল। বছরে কয়েক শত টন স্বর্ণ বিক্রি করত এসব ব্যাংক। ২০০৮-০৯ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে ইউরোপের ব্যাংকগুলো বিক্রি বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে ব্যাংকগুলো স্বর্ণ বিক্রির পরিবর্তে ক্রয়ের পরিমাণ বাড়াচ্ছে।
ডব্লিউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ২০২১ সালের তুলনায় স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা ১৮ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় চাহিদা ৫৫ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এ খাতে মূল্যবান ধাতুটির বছরে চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৩৬ টন, যা এর আগের বছরের তুলনায় ১৫২ শতাংশ বেশি।
ডব্লিউজিসি জানায়, নভেল করোনাভাইরাস মহামারী দেখা দেয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার হার কমে গেলেও ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে তা আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। এ সময় বিশ্বজুড়ে ক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬২ টনে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক লুইজ স্ট্রিট বলেন, ‘গত বছর আমরা স্বর্ণের বার্ষিক চাহিদা এক বছরের মধ্যে এক দশকের সর্বোচ্চে উন্নীত হতে দেখেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বছরজুড়ে সেফ হ্যাভেন খ্যাত ধাতুটির ক্রয় বাড়িয়েছে ব্যাপক হারে।’
গত বছর স্বর্ণ কেনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক, চীন, মিসর ও কাতারসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। তবে ব্যাংকগুলোর কেনা দুই-তৃতীয়াংশ স্বর্ণের তথ্য জনসম্মুখে আনা হয়নি।
এক্সচেঞ্জগুলোয় স্বর্ণে বিনিয়োগ চাহিদা এক বছরের ব্যবধানে ১০ শতাংশ বেড়েছে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০৭ টনে। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের বহিঃপ্রবাহে শ্লথগতি এবং স্বর্ণের বার ও মুদ্রার শক্তিশালী চাহিদা এমন প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়ে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অলংকারের চাহিদায়। গত বছর বিশ্বজুড়ে ২ হাজার ৮৬ টন স্বর্ণালংকার ব্যবহার হয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৩ শতাংশ কম। অন্যদিকে প্রযুক্তি খাতে ধাতুটির চাহিদা ৭ শতাংশ কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস চাহিদা কমার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে।
গত বছর স্বর্ণের বার্ষিক সরবরাহ ২ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৭৫৫ টনে উন্নীত হয়েছে। খনি থেকে উত্তোলন বেড়ে পৌঁছেছে ৩ হাজার ৬১২ টনে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
লুইজ স্ট্রিট বলেন, ‘চলতি বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাবে। রয়েছে অনেক বেশি মন্দার আশঙ্কাও। এ আশঙ্কা সত্য হলে স্বর্ণে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যেতে পারে।’