দেশে ডলার ও তারল্য সংকটে আমদানি বাণিজ্যে স্থবিরতা চলছে। ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যাংকগুলোর অনীহার কারণে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চাহিদামাফিক কনটেইনার পরিবহনে রেলওয়ে সক্ষম হয়ে উঠলেও ব্যবসায়ীরা কনটেইনারের জোগান দিতে পারছেন না। রফতানি বাড়লেও ছয় মাসের ব্যবধানে আমদানি কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ রেলওয়ের কনটেইনার পরিবহন-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের তথ্যমতে, ২০২২ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় কমলাপুর আইসিডি পর্যন্ত ৪ হাজার ৩১৭টি কনটেইনারে পরিবহন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ছয় মাস পর চট্টগ্রাম থেকে আমদানি কনটেইনার পরিবহন কমছে ১ হাজার ৩১১টি। যদিও একই সময়ের ব্যবধানে ঢাকা আইসিডি থেকে রফতানিমুখী কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে ৬৫টি। আমদানি কমে যাওয়ায় কমলাপুর আইসিডি থেকে খালি কনটেইনার পরিবহন ছয় মাসের ব্যবধানে ১ হাজার ৫৬৪টি কমে ৭৭০টিতে নেমে এসেছে। এ সময় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মোট কনটেইনার পরিবহন কমেছে ২৭ শতাংশ। রমজানের আগে প্রতি বছর ব্যবসায়ীরা আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেও এ বছর ঘটছে ঠিক তার উল্টো।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী ও কমলাপুর আইসিডি থেকে রফতানিমুখী কনটেইনার পরিবহনে রেলওয়ের ওপর ব্যবসায়ীদের আস্থা দীর্ঘদিনের। এক সময় চট্টগ্রাম থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার পরিবহনে দীর্ঘসূত্রতা থাকলেও বর্তমানে ইঞ্জিন ও লোকবল বৃদ্ধির মাধ্যমে শতভাগ সুবিধা দিচ্ছে রেলওয়ে। দেশে আমদানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সক্ষমতা অনুযায়ী সেভাবে কনটেইনারের চাপ নেই।’
কনটেইনার পরিবহন কমে যাওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে কমেছে কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যাও। এক সময় প্রতিদিন উভয়পথে গড়ে তিনটি করে কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে সেটি কমে গড়ে দুটিতে নেমেছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে আপ (চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী) রুটে ৮৯টি ও ডাউনে (ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী) ৯০টি, ডিসেম্বরে আপে ৯৭টি ও ডাউনে ৯৫টি এবং জানুয়ারি মাসে আপে ৯৭টি ও ডাউনে ৯৫টি করে ট্রেন কনটেইনার পরিবহন করেছে। এমনকি সর্বশেষ অর্থবছরের শেষ মাসে অর্থাৎ গত জুনে আপ ও ডাউনে ৯৪টি করে কনটেইনার ট্রেন চালিয়েছে রেলওয়ে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস কনটেইনার পরিবহন কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যা মাসে গড়ে ৬০টিতে নেমে এসেছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে রেলওয়ে কনটেইনার পরিবহন থেকে রেকর্ড ১০ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৮১ টাকা আয় করলেও ডিসেম্বরে আয় ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৬১১ টাকায় নেমে আসে। জানুয়ারির আয় বেড়ে ৯ কোটি ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৭৬৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির আয় আবারো কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ।
রেলওয়ের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক সময় পণ্য পরিবহনের জন্য চাহিদার বিপরীতে ইঞ্জিনের স্বল্পতা ছিল। কয়েক বছর আগেও দৈনিক ১৬টি ইঞ্জিনের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যেত ৯ থেকে ১০টি। বর্তমানে ইঞ্জিন সরবরাহের সক্ষমতা বেড়েছে রেলের। কোরিয়া থেকে ৩০টি নতুন লোকোমোটিভ আমদানির কারণে ইঞ্জিন স্বল্পতা কেটে গেছে। কিন্তু রেলপথে পণ্য পরিবহন বিশেষত কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ১০-১১টি ইঞ্জিনেই সীমাবদ্ধ থাকছে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম।