গত মঙ্গলবার দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে ‘এক্সপান্ডিং ওপোর্টুনিটিজ : টুয়ার্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়, ২০২৩ সালে এই অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৯ শতাংশ। তবে ২০২৪ সালে কিছুটা বেড়ে হবে ৫.৯ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ দুটিই আছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমা, সেবা খাতের শক্তিশালী পুনরুদ্ধার এবং সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন কমে যাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে। কিন্তু সুদের হার বৃদ্ধি এবং অর্থবাজারের অনিশ্চয়তা এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে নিম্নমুখী ঝুঁকি তৈরি করছে।
দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইসার বলেন, ‘বাইরের প্রতিকূল পরিবেশ গত তিন বছর দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ফেলছে। ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কিছুটা অসম্পন্ন।’ তিনি বলেন, ‘দেশগুলোর উচিত জ্বালানির কম মূল্য এবং বাণিজ্যিক ভারসাম্যের সুবিধা কাজে লাগানো। বিশেষ করে দেশগুলোকে সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হবে মধ্যমেয়াদে প্রবৃদ্ধির জোরালো করতে।’
ভুটান ছাড়া এই অঞ্চলের সব দেশের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমেছে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক। সংস্থা জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ ভারতের প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হবে ৬.৩ শতাংশ। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি এ বছর কমে হবে মাত্র ০.৪ শতাংশ। দেশটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কা। এই দেশটির জেডিপি প্রবৃদ্ধি এ বছর সংকোচিত হবে ৪.৩ শতাংশ। গত মাসে আইএমএফ এই দেশটির জন্য ঋণ অনুমোদন করেছে। মালদ্বীপ ও নেপালের অর্থনীতি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে পর্যটন সম্ভাবনার ওপর দাঁড়িয়ে। এ বছর মালদ্বীপের প্রবৃদ্ধি আসবে ৬.৬ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে নেপালের প্রবৃদ্ধি আসবে ৪.১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভুটানের প্রবৃদ্ধি আসবে ৪.৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক জানায়, এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার মূল্যস্ফীতি কমে হবে ৮.৯ শতাংশ। ২০২৪ সালে এ অঙ্ক কমে ৭ শতাংশের নিচে যাবে। কিন্তু স্থানীয় মুদ্রা দুর্বল হওয়ায় তা মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াচ্ছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ হতে পারে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে ৭.৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। সংস্থা মনে করছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমে এলে মধ্য মেয়াদে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতে নানা ধরনের কড়াকড়ি ও আমদানি নিষেধাজ্ঞার কারণেই দেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা তো আছেই।