ফোরামটি ২০২৩ সাল নিয়ে করা বার্ষিক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২২ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা দশমিক ৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ওই সময় চাহিদার পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর চাহিদা বাড়বে। ফলে জ্বালানিটির ব্যবহার গত বছরের তুলনায় ১ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর গোলার্ধে গত বছরের প্রথম ও শেষ প্রান্তিকে শীতের তীব্রতা কম থাকায় গৃহস্থালিেত গ্যাসের চাহিদা ছিল কম। অন্যদিকে ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে শিল্প খাতেও জ্বালানিটির ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে এশিয়া প্যাসিফিক ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওই বছর চাহিদায় নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরি হয়।
ফোরাম জানায়, ২০২২ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক ব্যবহার ৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার কোটি ঘনফুট। ঊর্ধ্বমুখী দামই ছিল এর মূল কারণ। এ পরিস্থিতিতে গত বছর অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কমে যায়। আংশিক বন্ধ হয়ে পড়ে সিমেন্ট, সার ও ইস্পাত খাতের মতো অনেক ভারী শিল্প। তবে এ বছর গ্যাসের দাম নিম্নমুখী হবে বলে প্রত্যাশা করছে ফোরাম। পাশাপাশি শিল্প খাতে জ্বালানিটির ব্যবহার বাড়ার সম্ভাবনাও অনেক।
গ্যাস এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হামেল বলেন, ‘প্রত্যক্ষ বাণিজ্য প্রবাহ, বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও বাজার কার্যক্রমের দিক থেকে বর্তমানে মৌলিক রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস। গত বছর নীতিনির্ধারকদের অগ্রাধিকার তালিকায় সবার ওপরে উঠে এসেছিল জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি। ওই সময় বাজারে অনিশ্চয়তা এমন প্রকট আকার ধারণ করে, যা এর আগে কখনো হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রাপ্যতা ও টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলা বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বিষয় নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’
এদিকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বাণিজ্য অব্যাহত বাড়ছে বলে জানিয়েছে গ্যাস এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ ফোরাম। গত বছরই জ্বালানিটির বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে গ্যাসের বাজার আরো বেশি বৈশ্বিক ও আন্তঃসংযুক্ত হচ্ছে। এলএনজির প্রিমিয়াম বাজার হিসেবে গত বছর এশিয়া প্যাসিফিককে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে আসে ইউরোপ।
সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর এলএনজির বৈশ্বিক আমদানির পরিমাণ ৪ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। আমদানির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪১ কোটি ৬০ লাখ টনে। চীন, ভারত উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি এলএনজি আমদানি হবে বলে মনে করছে এ ফোরাম।
২০২২ সালে প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ৭ শতাংশ বেড়ে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছিল। চলতি বছর বিনিয়োগ আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাজারে বাড়তে থাকায় অনিশ্চয়তা এক্ষেত্রে কিছুটা বাধা হয়ে উঠতে পারে।