রোববার বেলা ১১টায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চার দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
দাবি গুলো হলো- দেশীয় তামাক চাষী ও শিল্পের সুরক্ষা প্রদান, তামাকের নায্য মূল্য ব্যতিরেকে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানীর নিকট তামাক বিক্রি বন্ধ, তামাক চাষীদের স্বার্থে বিড়ির শুল্ক ১৮ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করা এবং তামাক চাষীদের উপর থেকে বহুজাতিক কোম্পানীর আগ্রাসন বন্ধ করা।
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত লাভলুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন লালমনিরহাট তামাক চাষী, ব্যবসায়ী ও বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক জামিল আক্তার। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সদস্য আমিন উদ্দিন বিএসসি, সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, কার্যকরী সদস্য লুৎফর রহমান, শ্রমিক নেতা প্রমুখ।
এসময় বক্তরা বলেন, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মাটি এবং আবহাওয়া তামাক চাষের উপযোগী। এই অঞ্চলে অন্য ফসলের ফলন ভালো না হওয়ায় এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত। তবে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না করতে পারায় আজ আমরা ঠিকমত তামাক চাষ করতে পারছি না। বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের তামাক চাষীরা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের বেধে দেওয়া দামে তামাক বিক্রি করতে বাধ্য করা হয় চাষীদের। এছাড়া ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিড়ি শিল্পের উপর মাত্রাতিরিক্ত করারোপের ফলে দেশীয় শ্রমঘন বিড়ি কারখানাগুলো ক্রমেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের উৎপাদিত তামাক বিক্রি বহৃত হচ্ছে। এতে তামাক চাষীরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। তাই দেশীয় তামাক চাষী ও শিল্পের সুরক্ষা প্রদান করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বক্তরা আরো বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তখনই স্বাধীনতা বিপক্ষের শক্তি বর্তমান সরকার তথা দেশের উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্থ করার লক্ষ্যে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিরোধীতা করে আমেরিকা-ব্রিটিশ সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিলেন। আবার সেই ব্রিটিশ-আমেরিকাসহ কিছু কিছু দেশ শেখ হাসিনার সরকারকে নির্বাচনের আগেই পতন করতে চায় এবং হুঁমকি-ধুমকি দিয়ে চলেছে।
এছাড়া ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি দেশীয় শিল্পগুলোকে ধ্বংসে নানা পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো এদেশের টোব্যাকো মার্কেট দখল করে আছে। তারা এদেশের মানুষের ফুসফুস পুড়িয়ে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। তারা তামাক চাষীদের জিম্মি করে কম দামে তামাক ক্রয় করছে। তামাকের নায্য মূল্য ব্যতিরেকে বহুজাতিক কোম্পানীর নিকট তামাক বিক্রয় বন্ধ করা হবে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর আগ্রাসন থেকে দেশীয় তামাক কোম্পানী ও বিড়ি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। দেশীয় তামাক কোম্পানী ও প্রাচীন শ্রমঘন বিড়ি শিল্প রক্ষায় এদেশ থেকে ব্রিটিশ বেনিয়াদের হঁটাতে হবে।
বিড়ি শ্রমিকরা জানান, বাংলাদের দেশের অর্থনীতিতে দেশীয় তামাক কোম্পানী ও বিড়ি কারখানার মালিকদের অবদান অপরিসীম। এই শিল্পের মালিকরা এ দেশে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। অথচ বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর ষড়যন্ত্রে এ শিল্পটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিড়ির মূল প্রতিদ্বন্দী হলো নিম্নস্তরের সিগারেট। বর্তমানে নিম্নস্তরের সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশ দখল করে আছে। এসব নিন্মস্তরের সিগারেটের সিংহভাগই বিদেশি কোম্পানির। নিন্মস্তরের সিগারেটের ভোক্তা বেশি থাকা সত্বেও শুল্কারোপ বৃদ্ধি না করলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হতে বঞ্চিত হবে। এতে একদিকে সরকার বছরে বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে আর অন্যদিকে দেশী তামাক কোম্পানী ও বিড়ি শিল্প মালিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দেশের তামাক চাষী ও দেশীয় কুঠির শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার্থে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিড়ির শুল্ক ১৮ টাকা থেকে ২ টাকা কমিয়ে ১৬ টাকা করতে হবে।
তামাক চাষীরা বলেন, ইউরোপের চাহিদা মেটাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এদেশের কৃষকদের জোর করে নীল চাষ করতে বাধ্য করত। ব্রিটিশরা নীলকে কৃষকদের শোষণ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। কৃষকদের সামান্য পরিমান দাদন দিয়ে জমিতে নীল চায় করাতে জোর-জবরদস্তি করা হত। বর্তমানেও ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি তামাক চাষীদের জিম্মি করে রেখেছে। তারা অবহেলিত তামাক চাষীদের সামান্য অর্থ দাদন দিয়ে তাদের কাছে কম মূল্যে তামাক বিক্রি করতে বাধ্য করায়। ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ছলে, বলে, কৌশলে এমন সব চুক্তিপত্র তৈরি করছে যাতে চাষীরা তাদের কাছে তামাক বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। সুতরাং তামাক চাষীদের উপর থেকে বহুজাতিক কোম্পানীর আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে।