সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আলোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কমিটির ১৫তম বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই আলোচনার বিষয়টি কার্যবিবরণী আকারে ৩ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তোলা হলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়।
ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন বিগত অর্থবছরে মেরামত ও সংস্কার কাজে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই টাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে উপজেলা সড়ক এবং পরবর্তীকালে গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মেরামত ও সংস্কারের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এসব কাজের ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়নের পর নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বাড়ার কারণে কাজর গতি মন্থর হয়। নির্মাণ সামগ্রীর বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী, মূল্য পুনর্নির্ধারণ হওয়ায় ওই কাজগুলো চলমান রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় কমিটির সদস্য ও বরিশাল-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি শাহে আলম বলেন, ‘এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে স্থানীয় সংসদ-সদস্যদের গালিগালাজসহ নানা রকম কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। কিন্তু এ রাস্তা তৈরি,মেরামত ও সংস্কার কাজের সঙ্গে সংসদ সদস্যরা জড়িত নন।’
নিজের নির্বাচনি এলাকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সেখানকার ২০০-৩০০ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে এবং অনেকগুলো রাস্তার কাজ শুরু হয়েও থেমে আছে। এ কারণে মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।’ তিনি বর্ষা মওসুম আসার আগেই এসব রাস্তা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত বা সংস্কার করার অনুরোধ জানান।
শাহে আলম এমপি আরও বলেন, ‘রাস্তাঘাটের ক্ষতি ঠেকাতে প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন করে নারীকর্মী থাকলেও তারা সঠিকভাবে কাজ করছেন না। তাদের নিয়োগের ব্যাপারেও অস্বচ্ছতা আছে।’
জাতীয় পার্টির এমপি (রংপুর-১) ও বাস মালিক সমতিরি সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গ্রামীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশার কারণে জনসাধারণের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।’ এ কারণে তাদের নির্বাচনি এলাকায় যেতে বিব্রতবোধ হয়। রাস্তার কাজের কার্যাদেশের মূল্য পুনর্নির্ধারণ হলেও রাস্তার সংস্কার বা মেরামত কাজ খুব মন্থর গতিতে চলছে। এ সময় তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এসব রাস্তার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান। এছাড়া গ্রামীণ কোন রাস্তার কাজ কখন শুরু করা হবে, তা অবহিত করার পাশাপাশি এসব কাজের উদ্বোধন স্থানীয় সংসদ-সদস্যদের দিয়ে করানোর প্রস্তাব করেন। তিনি রাস্তার ওপর খড় শুকানো বন্ধ, নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা এবং বিদ্যমান ড্রেনগুলোর সংস্কার করার অনুরোধ জানান।
এ সময় বাস মালিক সমিতির সভাপতি রাঙ্গা পৌর টার্মিনালের বাইরে রাস্তায় যত্রতত্র ট্রাক থেকে চাঁদা উঠানোর অভিযোগ করে বলেন, ‘এসব কারণে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।’ টার্মিনালের বাইরে মধ্যবর্তী কোনও অবস্থানে যাতে কোনও চাঁদা তোলা না হয়, সে ব্যাপারে কমিটির সুপারিশ প্রত্যাশার পাশাপাশি ইতোপূর্বে জারিকৃত চিঠির কপি আবারও পৌরসভাগুলোকে পাঠানোর অনুরোধ করেন।’
কমিটির সদস্য আব্দুল সালাম মুর্শেদীও গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংস্কারের ধীরগতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি রাস্তার ধরন বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এসব রাস্তার কাজ শুরু করার প্রস্তাব করেন।
সংসদ সদস্যদের অভিযোগের জবাবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, গ্রামীণ রাস্তাগুলোর মেরামত বা সংস্কার করার জন্য বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন, কিন্তু মাত্র ৩-৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।
রেট রিসিডিউল হওয়ার পরে থেমে থাকা কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান কমিটির সদস্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।
পরে কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ বিগত বন্যায় সিলেটের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসহ দেশের সব রাস্তা আগামী বর্ষা মওসুম আসার আগেই দ্রুত মেরামত ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন।
পরে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামতের সুপারিশ আসে কমিটির পক্ষ থেকে। অবশ্য এ কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে বুধবারের বৈঠকের অগ্রগতি প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।