এদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বরের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সংক্রান্ত বিধির ১ নং ধারা লঙ্ঘন করেছে এপেক্স ফুডস। ওই আদেশে বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত প্রতিটি সিকিউরিটি ইস্যুকারী উহার কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ত্রিশ মিনিটের মধ্যে কিংবা তথ্যটি উহার গোচরে আসার তারিখেই তাৎক্ষণিকভাবে উহার চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা কোম্পানি সচিবের স্বাক্ষরে লিখিতভাবে একই সাথে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জ (যদি উভয় এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাকে তবে একই সাথে উভয় এক্সচেঞ্জ) এর নিকট ফ্যাক্স ও বিশেষ বার্তাবাহক মারফত, ক্ষেত্রবিশেষে কুরিয়ার সার্ভিসযোগে প্রেরণ করিবে; এবং উক্ত তথ্য বহুল প্রচারিত দুইটি দৈনিক পত্রিকায় (একটি বাংলা এবং অপরটি ইংরেজি) ও একটি অনলাইন পত্রিকায় অবিলম্বে প্রকাশনা নিশ্চিত করিবে।
অপরদিকে ডিএসইর বিরুদ্ধেও এপেক্স ফুডস নিয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ করছে বিনিয়োগকারীরা। কারণ কোম্পানিটির পর্ষদ সভা ছিল গত ২০ এপ্রিল। সে হিসেবে ২০ এপ্রিলের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবগত করার বিধান থাকলেও বিনিয়োগকারীরা এখনো এ বিষয়ে জানতে পারেনি। এছাড়াও কোম্পানিটির পর্ষদ সভার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ১৪১ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা শতাংশের হিসেবে ৪৬ দশমিক ২২ শতাংশ।
এদিকে এপেক্স ফুডসের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ বাড়লেও তারা শেয়ার ক্রয়ের কোন ঘোষণা দেননি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে গত মাসে কোম্পানিটির শেয়ার ক্রয়ের কোন ঘোষণা প্রকাশ করা হয়নি। তবে হঠাৎ করে কিভাবে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিপুল পরিমাণ শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সেটির কোন ব্যখ্যাও নেই ডিএসইতে ।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এপেক্স ফুডসের কোম্পানি সচিব কামরুল ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা কোন শেয়ার ক্রয় করেননি। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এ ধরণের কোন তথ্য নেই। তবে কোম্পানির চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের স্ত্রীর কাছে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার ছিল। তিনি এতদিন সাধারণ শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ছিলেন, পর্ষদ সভায় তাকে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাঁর শেয়ার এখন উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি দুই-একদিন আগে ডিএসইকে জানানো হয়েছে। কামরুল ইসলামের ভাষ্যমতে এপেক্স ফুডস থেকে চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে পর্ষদে যুক্ত করার বিষয়টি ডিএসইতে জানানো হলেও এক্সচেঞ্জ থেকে ট্রেডিং সিস্টেমে বিষয়টি প্রচার করা হয়নি।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার অর্থসংবাদকে বলেন, এপেক্স ফুডসে নতুন পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি কোম্পানির পক্ষ থেকে ডিএসইকে জানানো হয়নি। শুধুমাত্র শেয়ারহোল্ডিং পজিশন প্রতি মাস শেষে রিপোর্ট আকারে ডিএসইকে জানানো হয়, সেখান থেকে শেয়ারহোল্ডিং পজিশন আপডেট করা হয়েছে। নতুন পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি কেন ডিএসইকে জানানো হয়নি, সে বিষয়ে এপেক্স ফুডসকে শোকজ করা হবে।
সূত্র মতে, ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এপেক্স ফুডসের উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে এপেক্স ফুডসের ৩৬ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার ছিল- এমন তথ্য দেওয়া আছে ডিএসইর ওয়েবসাইটে। চলতি বছরের মার্চ মাসেও একই পরিমাণের শেয়ার ছিল কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে। তবে সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়া তথ্য এবং এপেক্স ফুডসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ৩০ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫০টি শেয়ার ধারণ করছেন। যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ৫৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।