জানা গেছে, নিয়মিত এমডি না থাকায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম ফারুক।
২০১৪ সালে ব্যবস্থাপনাকে মালিকানা থেকে পৃথককরণ (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) কার্যকর হয়। এরপর ডিএসইর তিনজন এমডির মধ্যে দুজনই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদত্যাগ করেছেন। সিএসইতেও তিনজন এমডির মধ্যে দুজন মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। বর্তমানে দুই শেয়ারবাজারের কোনটিতেই নিয়মিত এমডি নেই। ফলে দুই শেয়ারবাজারেই কাজের স্বাভাবিক গতিতে ব্যঘাত ঘটছে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সম্প্রতি একাধিক দিন লেনদেন বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ভুল তথ্যও প্রকাশ করেছে ডিএসই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তাৎক্ষনিকভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত এমডি এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ফলে প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট খাতের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তারিক আমিন ভূঁইয়া। তবে এক বছরের মাথায় গত বছরের ২৩ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তারিক আমিন ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি তিন বছরের জন্য ডিএসইর এমডি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে গত ১৩ মাস অতিক্রম করেছি। এ সময়ে আমি ডিএসইতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারিনি, যা করেছি তাতেও নানা আপত্তির মুখে পড়েছি। তাই আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি।’
শুধু তারিক আমিন ভূইয়াঁই নয়, তাঁর আগের এমডি ছিলেন কাজী ছানাউল হক। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য ডিএসইর এমডি পদে যোগদান করেন তিনি। তবে আট মাস না যেতেই ওই বছরের ৮ অক্টোবর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।
এদিকে গত বছরের (২০২২) ডিসেম্বরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এমডি নিয়োগের জন্য ডিএসইকে সময় বেধে দিয়েছিল। ওই সময় ডিএসইকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছিল, কমিশনে ডিএসই’র এমডি নিয়োগে পর্ষদের সুপারিশ জমা দেওয়ার জন্য ৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে এমডি নিয়োগের সুপারিশ জমা দিতে ডিএসই-কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ চলতি বছরের ৮ জানুয়ারির মধ্যে ডিএসইর এমডি নিয়োগের সুপারিশ বিএসইসিতে জমা দেওয়ার কথা ছিল। এর প্রেক্ষিতে তিন জনের নাম প্রস্তাব করে বিএসইসিতে পাঠায় ডিএসই। তবে বিএসইসি কাউকে যোগ্য মনে না করায় সেই প্রস্তাব বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার জন্য বলা হয় ডিএসইকে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু অর্থসংবাদকে বলেন, আমরা মার্চ মাসে দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বেই সাবেক পর্ষদ বিএসইসিতে এমডি নিয়োগের জন্য একটি তালিকা পাঠিয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে আমরা কাজ করছি, বসে নেই। আমরা সবাই চাই ভালো একজন লোক এমডি পদে আসুক।
তিনি আরও বলেন, বিএসইসি থেকে সপ্তাহখানেক আগে এমডি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিতে চিঠি দিয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। সবকিছু গুছিয়ে নিতে আমাদের একটু সময় লাগবে। পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজ করলে ভুল হতে পারে। তাই আমরা একটু বুঝেশুনে এগুতে চাই।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, ডিএসইতে এমডি ছিল, সম্ভবত আগের পর্ষদের সঙ্গে একটা টানাপোড়েন ছিল। এজন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন। এমডি নিয়োগের বিষয়টি ডিএসই এবং সিএসইকেই সম্পন্ন করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী বিএসইসিকে অবহিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এমডি না থাকার কারণে হয়তো ডিএসই-সিএসই কোনরকমভাবে চলছে। এমডির প্রয়োজন আছে বলেই তো পদটা আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন এমডি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক না থাকলে অবশ্যই কাজের ব্যঘাত ঘটবে।