মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ
উৎপাদন মৌসুমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ রয়েছে পেঁয়াজ আমদানি। শুরুর দিকে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এক মাসের ব্যবধানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে আবারো পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। চাহিদার চেয়ে দেশে উৎপাদন বেশি হলেও অব্যবস্থাপনার কারণে ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২৬-২৮ লাখ টন। গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ ৪১ হাজার টন।

এ বছর কয়েকটি জেলায় ভেজাল বীজের কারণে পেঁয়াজের চারা কম গজানো ও গজানোর পরে মরে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক। ফলে এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সাধারণত মার্চ ও এপ্রিলে পেঁয়াজ কর্তন করে ঘরে তোলেন কৃষক। এরপর চাইলে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে ৩০-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়। তবে এ বছর বৃষ্টিতে ভেজায় ও বীজের মধ্যে কয়েকটি জাতের মিশ্রণ থাকায় ফলন কমের পাশাপাশি এপ্রিল থেকেই কৃষকের পেঁয়াজে পচন শুরু হয়েছে। কৃষক বলছেন, এ পেঁয়াজ রেখে দিতে গেলে জুন পর্যন্ত ৭০ শতাংশই পচে যাবে। মূলত মানহীন বীজ ও বৃষ্টির কারণে পানি পড়ায় এবার আগেভাগেই পচে যাচ্ছে পেঁয়াজ।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। এক মাস আগে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৬-২৮ লাখ টন। বর্তমানে এক কেজি দেশী পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮-৩০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি বিদেশী পেঁয়াজ কিনেছিলেন। দেশী পেঁয়াজের বাজারদর কম ছিল, ৩০-৩৫ টাকা ছিল। সে কারণে কৃষক কম দাম পেয়েছিলেন। সেজন্য পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে এ বছর পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

যদিও উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক বছরে আমদানি কিছুটা কমেছে। তবে সংরক্ষণ দুর্বলতায় উদ্বৃত্তের সুফল ভোগ করতে পারছে না বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ লাখ ৬৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে করা হয় ১০ লাখ ৭ হাজার টন। ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৩ হাজার টন ও ৬ লাখ ৬৫ হাজার টনে। মূলত কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পেঁয়াজের মৌসুমে আমদানি বন্ধ রাখে সরকার। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ মার্চ থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় ফের আমদানির কথা ভাবছে সরকার।

গতকাল সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণসংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। উৎপাদন ও মজুদ বিবেচনায় দেশে এ মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই অথচ বাজারে দাম কিছুটা বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের বাজার সবসময় মনিটর করছে। দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকলে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। পেঁয়াজে সাধারণত ৩০-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন-পরবর্তী ক্ষতি হয় নানা কারণে। ফলে চাহিদার চেয়ে ৬-৭ লাখ টন বেশি উৎপাদন হলেও পোস্ট হারভেস্ট লসের কারণে সেটা কমে যায়। এ কারণে আমদানি করতে হয়। কৃষক যখন পেঁয়াজ উত্তোলন করেন তখন দাম কম ছিল। কিন্তু এরপর হঠাৎ কেন দাম বাড়ল সেটা সরকারের মনিটর করা দরকার। লাভ তো কৃষকের কাছে যায়নি। কাদের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।’

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ