২০ মিনিট দেরি করে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসায় গুচ্ছের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে মেহেরুনের। সাভার থেকে যানজট ঠেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রে আসতে দেরি হওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি। মানবিক কারণে দেরি করে আশা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হলেও কক্ষ পরিদর্শকের আপত্তিতে পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জবি উপাচার্য।
শনিবার (২০ মে) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে গুচ্ছ পদ্ধতির ‘বি ইউনিটের’ পরীক্ষার সময় এ ঘটনা ঘটে।
পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট পর মেহেরুন কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও দেরিতে আসায় দায়িত্বরত শিক্ষকরা একবার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দিয়েও পরবর্তীতে আবার ফেরত নিয়ে পরীক্ষা কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। পরীক্ষা দিতে না পারায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
পরবর্তীতে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে পরীক্ষা কমিটির সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বললেও সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
মেহেরুন বলেন, ‘যানজটের কারণে আমি ২০ মিনিট দেরি করে পরীক্ষা দিতে আসি। পরে এক স্বেচ্ছাসেবী আপু আমাকে রফিক ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। সেখানে আমাকে একজন স্যার বলেন, ওএমআর শিট নেই, পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। এভাবে হয়রানির মাধ্যমে আরও কিছুটা সময় ক্ষেপণ করেন। পরবর্তীতে স্যার বলেন, চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে হবে। চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে নিতে ১২টা ৪০ বেজে যায়। অনুমতি নিয়ে আমাকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হলেও পরবর্তীতে সেটি আমার নির্ধারিত কক্ষ নয় এমন কারণ দেখিয়ে তা প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে আমার নির্দিষ্ট কক্ষে (৪০১) উপস্থিত হলেও আমাকে পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।’
মেহেরুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে যখন পরীক্ষা দিতে দিবে না তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটেই আটকাতো। ভেতরে আসার পর প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এখানে ওখানে ঘুরিয়ে কেন আমাকে হয়রানি করা হলো? মানবিক বিবেচনায় অনেকেই দেরিতে এসে পরীক্ষা দিয়েছে। আমাকে সেই সুযোগটা দিতে পারতো। অনেকেই পরীক্ষা দিতে পারলেও আমাকেই শুধু পরীক্ষা দিতে দেওয়া হলো না। বরং হয়রানি করা হলো।
এ বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক রইছ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীর উচিৎ ছিল আমাদের কাছে রিপোর্ট করা। যেহেতু পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে এখন আর কিছু করার নেই।’
এখানে দায়িত্বরত শিক্ষকদের কোনো অবহেলা দেখছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্বের কোনো অবহেলা ছিল না। পরীক্ষাকক্ষের দায়িত্বরত শিক্ষক আমাদের শুরুতেই জানালে কিছু করা যেত। আমরা হয়তো বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নিতে পারতাম।’
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের কাছে গিয়ে ওই শিক্ষার্থী বিস্তারিত ঘটনা উপস্থাপন করেন। ঘটনার বিবরণ শুনে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
উপাচার্য বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০-৩০ মিনিট দেরি করে এলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিয়েছি। পরীক্ষাকক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষকরাই এটি দেখবে। আজকে উপকেন্দ্র নটরডেম কলেজের একজন পরীক্ষার্থী ভুল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলে এসেছে। আমি জানার পর তারও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমাকে যদি আগে বিষয়টি জানানো হতো তাহলে কোনো কিছু করা যেতো। যেহেতু আমাকে পরে জানানো হয়েছে সেহেতু এখন আর দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার নাই।’
পরীক্ষার কক্ষে শিক্ষকের হেনস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে জবি উপাচার্য বলেন, ‘আমাকে যদি লিখিত অভিযোগ দিয়ে যায় অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরবর্তীতে মেহেরুন উপাচার্য বরাবর পরীক্ষার হলে শিক্ষকের হয়রানির প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।