আগস্টে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের পারফরম্যান্স ছিল অভাবনীয়। আলোচিত সময়ে এই বাজারের রিটার্ন ছিল ডেভেলপড মার্কেট, ফ্রন্টিয়ার মার্কেট ও এমার্জিং মার্কেট-সব সব পুঁজিবাজারের চেয়ে বেশি।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্রোকারহাউজ ব্র্যাক-ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। নিজস্ব তথ্য-উপাত্ত ও ব্লুমবার্গ ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ, নানা ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে বিশ্বপুঁজিবাজারকে ডেভেলপড মার্কেট, ফ্রন্টিয়ার মার্কেট ও এমার্জিং মার্কেট-এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। সবচেয়ে পরিণত বাজারগুলোকে ডেভেলপড মার্কেট বলা হয়। আর সবচেয়ে কম বিকশিত বাজারকে বলা হয় ফ্রন্টিয়ার মার্কেট। ডেভেলপড ও ফ্রন্টিয়ার মার্কেটের মাঝামাঝিতে অবস্থানরত বাজারগুলোকে চিহ্নিত করা হয় এমার্জিং মার্কেট হিসেবে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অবস্থান ফ্রন্টিয়ার মার্কেট ক্যাটাগরিতে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের বাজারকে বলা হয় ডেভেলপড মার্কেট। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ আছে এমার্জিং মার্কেটের তালিকায়।
প্রতিবেদন অনুসারে, গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বাজারে রিটার্ন ছিল ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা সকল সেগমেন্টেই সবচেয়ে বেশি। এই সময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিটার্ন ছিল ভিয়েতনামে (১০.৪০%); তৃতীয় সর্বোচ্চ রোমানিয়ার বাজারে (৭.৪%)। এই তিনটি বাজারই ফ্রন্টিয়ার মার্কেট ক্যাটাগরিভুক্ত।
ডেভেলপড মার্কেটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ছিল সবচেয়ে বেশি রিটার্ন, যার হার ৭.২ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.৬ শতাংশ ছিল জাপানের বাজারে।
অন্যদিনে এমার্জিং মার্কেটগুলোর মধ্যে মিশর ও কম্বোডিয়া ৭.২ শতাংশ রিটার্ন নিয়ে ছিল সবার উপরে। রিটার্নের দিক থেকে পরের দুটি অবস্থানে ছিল যথাক্রমে পেরু (৬.৫%) ও কাতার (৬.২%)।
রিপোর্টে বলা হয়, বেশ কিছু কারণে আগস্ট আসে বাংলাদেশের বাজার অসাধারণ পারফরম করেছে। এর মধ্যে আছে-করোনাভাইরাস মোকাবেলাজনিত সাধারণ ছুটি শেষে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া, রপ্তানি আয়ে ইউটার্ন, রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নতুন কমিশনের নানামুখী উদ্যোগ।
প্রতিবেদনে বিএসইসির নতুন কমিশনের বেশ কিছু উদ্যোগকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও নীতিনির্ধারকদের সাথে নতুন কমিশনের বৈঠক ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, সিকিউরিটিজ আইনের পরিপালনে কঠোর অবস্থান, আইনলংঘনকারী কোম্পানি ও ব্রোকারহাউজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্দেজনক আইপিও আবেদন বাতিল করা, নতুন প্রোডাক্ট চালুর উদ্যোগ, বাজারে স্বচ্ছতা বাড়াতে রিপোর্টিংকে গুরুত্ব দেওয়া এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সহজে রিপোর্ট জমা দেওয়ার ব্যবস্থা। এসব উদ্যোগের ফলে কমিশন ও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীসহ স্টেকহোল্ডারদের আস্থা বেড়েছে। অন্যদিকে বিএসইসির উদ্যোগের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন ব্যবস্থায় বাজারে তারল্য বেড়েছে। আর এসব বিষয়ের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আগস্ট মাসের পারফরম্যান্সে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বাজারের গতি ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সব সময় সচেষ্ট থাকতে হবে। তাদের মতে, আগের কমিশনের মেয়াদে নানা কারণে তীব্র অনাস্থা তৈরি হওয়ায় বাজার একেবারে তলানীতে নেমে এসেছিল। তাই কমিশনে পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট নতুন আশাবাদ, কমিশনের নেওয়া কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বাজারে তারল্য বৃদ্ধির কারণে জুলাই-আগস্টে বাজার গতিশীল হয়ে উঠে। এটিকে ধরে রাখতে হলে বাজারে গভর্ন্যান্স বাড়াতে আরও সচেষ্ট হতে হবে, নতুন প্রোডাক্ট চালুর উদ্যোগগুলো ত্বরান্বিত হরতে হবে, প্রয়োজনে কিছুপরিবর্তন এনে হলেও স্টক এক্সচেঞ্জ দটিকে আরও সক্ষম এবং দক্ষ করে তুলতে হবে এবং বাজারে ভাল মানে বড় কিছু আইপিও নিয়ে আসতে হবে।