মঙ্গলবার (৩০ মে) উবারসহ ১০টি ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক সভা শেষে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সভায় উপস্থিত একটি সূত্র জানায়,কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে উবারকে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়ার প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশকিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে উবারকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে উবার টাকায় পেমেন্ট নেবে। তবে বিদেশি কোনো নাগরিক তাদের কার্ডের মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি পেমেন্ট করতে চাইলে তা করতে পারবেন।
"উবারকে বাংলাদেশি কোনো করেসপন্ডিং ব্যাংক বা পিএসও পেমেন্ট গেটওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে কোনো পেমেন্ট হলে সেটি করেসপন্ডিং ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে যোগ হবে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করে যতটুকু ফরেন কারেন্সি বাইরে নেওয়ার অনুমতি আছে, সেটুকু টাকা থেকে ডলারে কনভার্ট করে উবার তাদের মাদার কোম্পানির অ্যাকাউন্টে নিতে পারবে," যোগ করেন তিনি।
এছাড়া, কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কার্ডের মাধ্যমে ফরেন কারেন্সিতে পেমেন্ট করলে সেটিও বাংলাদেশের করেসপন্ডিং ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। পরে নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করে মাদার কোম্পানির অ্যাকাউন্টে নিতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জানা যায়, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কার্ডের মাধ্যমে কোনো পেমেন্ট নিতে পারেনি উবার। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তারা কার্ডের মাধ্যমে যে পেমেন্ট নিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ৮.৪১ লাখ ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত না করেই নেদারল্যান্ডসে তাদের মাদার কোম্পানির অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে উবারের কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়া বন্ধই ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, "ব্যাংকগুলো দেশে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়া বন্ধ করলেও আমাদের দেশের নাগরিকেরা বিদেশে গিয়ে উবার ব্যবহার করলে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারছিল না। ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছিল, যে শুধুমাত্র দেশের বর্ডারের বাইরে কার্ডের মাধ্যমে উবারের পেমেন্ট করার বিষয়টি সমাধান করার জন্য। তবে খুব বেশি ব্যাংক সেটির ব্যবস্থা করতে পারেনি।"
ব্যাংকগুলোকে একারণেই সভায় ডাকা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "এফইপিডি থেকে করা সার্কুলারে বলা ছিল, দেশের ভেতরে কোনো পেমেন্ট যেন ফরেন কারেন্সিতে না নেওয়া হয়। এটি বন্ধ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো বিদেশেও ফরেন কারেন্সিতে উবারের পেমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ, ব্যাংকের সিস্টেমে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্টে এক দেশে অন আর আরেক দেশে অফ রাখতে পারে না। ব্যাংকগুলো এটি কেন পারছে না, ট্যাকনিক্যালি তাদের কোনো সমস্যা আছে কিনা, সেটি জানার জন্যই ব্যাংকগুলোকে সেখানে ডাকানো হয়েছিল।"
"দু-একটি ব্যাংক বলেছে যে তারা ডমেস্টিক ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সেকশন আলাদাভাবে করতে পারে, তবে বেশিরভাগ ব্যাংকই সেটি পারে না," যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সারওয়ার হোসেন বলেন, "ব্যাংকগুলো ফরেন কারেন্সি ও লোকাল কারেন্সি পেমেন্ট আলাদা করতে না পারায় কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। আজকের সভায় কার্ডের মাধ্যমে উবারের পেমেন্ট দেশে লোকাল কারেন্সিতে এবং বিদেশে ফরেন কারেন্সিতে কীভাবে পেমেন্ট করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পেমেন্টটি চালু করতে লোকাল করেসপন্ডিং ব্যাংকের সঙ্গে তাদের পেমেন্ট নিয়ে একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেটি হয়ে গেলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।"
প্রসঙ্গত, কার্যক্রম শুরুর পরই এখানকার সেবার অর্থ সরাসরি বিদেশি মূল কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল উবার বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড। কিন্তু এ উপায়ে প্রকৃত আয়ের তথ্য গোপনের আশঙ্কায় তা নাকচ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।