রবিবার (৪ জুন) ‘ডিসকাশন অন বাজেট: প্রেক্ষিত পুঁজিবাজার’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাছান বাবু, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি’ রোজারিও এবং বিএমবিএ প্রেসিডেন্ড মো. ছায়েদুর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা অর্থনীতির উন্নয়নের পথে রয়েছি। আমাদের দেশে এখনো পুঁজিবাজারকে হয়তো তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়না। কিন্তু আস্তে আস্তে এ গুরুত্বটা বাড়বে।
তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া উচিৎ। আমি যখন অর্থপ্রতিমন্ত্রী ছিলাম তখন এই কথা বলেছি। কিন্তু কেন জানি এসব কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয়নি।
অগ্রিম আয়কর নিয়ে তিনি বলেন, আইটি (অ্যাডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স) মিলিটারি কায়দায় চাপিয়ে দেয়ার মতো। এই আইন বাদ দেয়া উচিৎ।
বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কেবল ব্যাংক নির্ভরতা নিয়ে অর্থনীতি পুরোপুরি সাবলম্বী হওয়া সম্ভব না। পুঁজিবাজারই হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ১৫ শতাংশ করতে হবে। লভ্যাংশের দ্বৈত কর প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। লভ্যাংশ আয়ের ওপর উৎসে করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। দ্বৈত কর প্রত্যাহার করে শুধুমাত্র কোম্পানি থেকে ট্যাক্স নিলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের আগ্রহ তৈরী হতে হবে।
ডিবিএর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি’ রোজারিও বলেন, দেশের ছোট ছোট কোম্পানিকে নিয়ে আসতে হবে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরী করতে হবে। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজার ভূমিকা রাখতে পারে। বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে কিছু না থাকা অত্যন্ত হতাশাজনক।
করহারের পার্থ্যক্য বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনেক জায়গায় জবাবদিহি থাকে। স্টক এক্সচেঞ্জ, বিএসইসিসহ অনেক জায়গায় জবাবদিহি করতে হয়। তালিকাভুক্ত হলে টার্নওভার ভালো দেখাতে হয়। ফলে এখন যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে চাচ্ছে না, তাঁরা অনেকেই তালিকাভুক্ত হবে। এতে সরকার লাভবান হবে।
সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, দেশের শিল্পায়নে এখন পর্যন্ত যে বিনিয়োগুলো হয়েছে তার সিংহভাগই ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে। অথচ এটি পুঁজিবাজারে মাধ্যমে হওয়া উচিত ছিলো। পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা তৈরি না হলে দেশের অর্থনীতিকে কখনোই স্থিতিশীল অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বন্ড মার্কেটের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে জিরো কুপন বন্ডের মতো সব ধরনের বন্ডকে করমুক্ত করা উচিত।
ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেন, বিশ্বের বড় দেশগুলোতে পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেখানে আমাদের দেশে এটাকে কোনঠাসা করে রাখা হচ্ছে। কোনঠাসা হয়ে আছে। আমি বিশ্বাস করি, পুঁজিবাজারকে কোনঠাসা করে রাখা যাবে না, কোনঠাসা থাকবে না। কারণ এটার সঙ্গে দেশের সর্বস্থরের মানুষ আছে, এর মধ্যে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে।
সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান।