জানা গেছে, আইটি প্রতিষ্ঠান মিত্র তৃতীয় পক্ষ হিসেবে অর্জিত মজুরির বিপরীতে পোষাক শ্রমিকদের ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে। অথচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেই এ ধরণের প্রতিষ্ঠানের। অপরদিকে অর্থ পাচারের একটি মাধ্যমও হতে পারে আর্ন ওয়েজ ঋণ সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি। শুধু মিত্র নয় ওয়েজলিসহ এ ধরণের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান না হয়েও চড়া সুদে ঋণ দিচ্ছে। একই সঙ্গে শুধুমাত্র রপ্তানিমুখী পোষাক শিল্প কারখানা শ্রমিকদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থপাচারের নতুন রাস্তা তৈরী করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে অভিযোগ উঠেছে এসব কোম্পানিগুলো পোষাক শ্রমিকদের অগ্রিম বেতনের আড়ালে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে অর্থপাচার করছে। যেহেতু মিত্র ও ওয়েজলি অফশোর কোম্পানি, মিত্র’র শেয়ারের মধ্যে নামে মাত্র বাংলাদেশি নাগরিকের মালিকানা থাকলেও ওয়েজলির সেটিও নেই। ওয়েজলির মাত্র একটি শেয়ার রয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকের। বাকি সব শেয়ার পাকিস্তানি নাগরিকসহ বিদেশিদের দখলে রয়েছে।
জানা গেছে, মিত্র’র মূল কোম্পানি সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিত্র পিটিই লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটির মূল কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পাকিস্তানি নাগরিক। একইসঙ্গে ওয়েজলিও সিঙ্গাপুরভিত্তিক জার্মান নাগরিকদের প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো অফশোর কোম্পানি হওয়ায় দেশে লেনদেন হওয়া অর্থ বিদেশে লেনদেনের নিষ্পত্তি হওয়ার আশঙ্কা উল্লেখযোগ্য বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
মিত্র ও ওয়েজলির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম বর্হিঃভূতভাবে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো লামসাম ফি বা মেম্বার ফির নামে একটি বাড়তি অর্থনৈতিক সুবিধাও গ্রহণ করছে তাদের সেবা গ্রহনকারীর কাছ থেকে। এখানেই শেষ নয়, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ মালিকানার শেয়ার বিদেশীদের হওয়ায় অর্থপাচার এবং হুন্ডি ব্যবসার একটি ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া চলমান এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদের হারও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত বাৎসরিক সুদের হারের কয়েকগুণ বেশি। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ রপ্তানীমুখী পোশাক শিল্প কারখানা হওয়ায় তারা ইচ্ছে করলেই শিল্পকারখানার মালিকের যোগসাজশে অর্থপাচারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থসংবাদের কাছে এসব আইটি প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এদিকে একাধিক লেনদেনের তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের (২০২২) ২৯ জানুয়ারি একজনকে ১০ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা প্রদান করেছে ওয়েজলি। একই সঙ্গে সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে মেম্বারশীপ ফি বাবদ ১০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। একই ব্যক্তিকে গত বছরের মে মাসে আবারও ১০ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা দিয়ে পুনরায় ১০০ টাকা মেম্বারশীপ ফি নেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরও দুইবার ঋণ সুবিধা নেওয়ায় ওই ব্যক্তির কাছ থেকে যথাক্রমে ১০০ এবং ১২৫ টাকা করে মেম্বারশিপ ফি আদায় করে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেম্বারশিপ ফির নামে মূলত আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করছে ওয়েজলি যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ বিতরণের নীতিমালার নিয়ম বর্হিভূত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, অফশোর কোম্পানির আড়ালে যদি অর্থপাচার করা হয় তাহলে সেটি দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্সের (বিএফআইইউ)। তারা সেটি দেখবে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব এবং এসব প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
জানতে চাইলে বিকাশের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম অর্থসংবাদকে বলেন, ওয়েজলি এবং মিত্র’র সাথে বিকাশের কোন চুক্তি হয়েছে কিনা তা সঠিক বলতে পারছি না। বিষয়টি জেনে তারপর জানাতে হবে। ওদের সাথে বিকাশের চুক্তির বিষয়ে একবার আলোচনা হয়েছিল, তবে চুক্তি হয়েছে কি না সেটি সঠিক জানা নেই।
এসব বিষয়ে জানার জন্য মিত্র ও ওয়েজলির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা সম্ভব হয়নি। মিত্র’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিশোয়ার আহমেদ প্রথমে মুঠোফোনে কল রিসিভ করলে অর্থসংবাদের পরিচয় পেয়ে কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ওয়েজলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর ই ইলাহীকে মুঠোফোনে একাধিকার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।