গত অর্থবছরের (২০২১-২০২২) মে মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের মে মাসে রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ৫৩.৮৩ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মে মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৫০৯৬৮২ কোটি টাকা।
আবার চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৬৫৩০.৬৮ কোটি টাকা। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছিলো ৫৩১৫৭.৩৩ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোঃ বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, 'ডলার সংকটের কারণে সরকার আমদানি সীমিত করায় ক্রমাগত গত কয়েক মাসে কমেছিলো আমদানির পরিমাণ। ফলে কমে গেছে রাজস্ব আয়। তবে গত এপ্রিল, মে মাসে আমদানি বাড়ায় কাস্টমসের রাজস্ব আদায় বেড়েছে। আশা করছি জুন মাসেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।'
বাজেটকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত মার্চ থেকে বাড়তে শুরু করেছে আমদানি। তবে নতুন বাজেট শুরু হওয়ার আগে গত কয়েকমাসের তুলনায় মে মাসে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানি। এর ফলে দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসেও মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বাজেটকে টার্গেট করে অর্থবছরের শেষের দিকে আমদানি বৃদ্ধির প্রবণতা থাকে। বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধির আশংকা থেকে মূলত আমদানিকারকরা বাড়তি পণ্য আমদানিতে নজর দেয়। এ কারণে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ এপ্রিল, মে, জুন মাসে আমদানি পূর্বের মাসগুলোর তুলনায় বেড়ে যায়। ফলে চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১,১৮৮৩ টিইইউস (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট)। এপ্রিলে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিলো ১,০৭,৭৫২ টিইইউস। অর্থাৎ মে মাসে এপ্রিলের তুলনায় ৯১৩১ টিইইউ বেশি আমদানি হয়েছে।
গত মার্চে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিলো ৯৮,৭৩৬ টিইইউস। এপ্রিলে মার্চ মাসের তুলনায় আমদানি বেড়েছিলো ৯০১৬ টিইইউস। সেই হিসেবে দুই মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ মার্চ মাসের তুলনায় মে মাসে আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮,১৪৭ টিইইউস।
এদিকে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে দেশে সার্বিক রপ্তানি আয় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মে মাসে কমেছে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। মে মাসে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৫০২৭৭ টিইইউস। এপ্রিল মাসে রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছিলো ৫৫৯৪০ টিইইউস। আর মার্চ মাসে রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং হয় ৫৫১৬০ টিইইউস।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'দেশে আমদানি বৃদ্ধির হওয়া অর্থনীতির জন্য সুখবর। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তীব্র ডলার সংকট তৈরি হয়। তাই চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করা যাচ্ছিল না। আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে যেমন সাপ্লাই চেইনে উন্নতি ঘটবে, তেমনি রাজস্ব আয়ও বাড়বে।'
টানা পাঁচ মাস কমার পর মে মাসে রাজস্ব আয়ে রেকর্ড চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের
টানা ৫ মাস রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পর মে মাসে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে কাস্টমসের। শুধু তাই নয় মে মাসে অর্থবছরের ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ডও হয়েছে। এর আগে চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছিলো গত আগস্ট মাসে ৫৪৯৮.৪৮ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়, গত এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিলো ১.৫২ শতাংশ। মে মাসে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক হওয়ার আশংকা করেছিলেন কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা। তবে মে মাসে রেকর্ড আয় হওয়ায় সার্বিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৫৩ শতাংশ।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেশি হয় এমন পণ্য গাড়ি, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্স সহ বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তবে বাজেটের আগে মে মাসে গাড়ি আমদানি বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বেড়ে যায়।
মে মাসে জাপান থেকে দুটি জাহাজে আমদানি হয়েছে ২৬৪১টি গাড়ি, যা চলতি অর্থবছরের মধ্যে মাস হিসেবে সর্বোচ্চ গাড়ি আমদানির রেকর্ড। এসব গাড়ির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয় ১,০০৯টি। বাকিগুলো খালাস হয়েছিলো মোংলা বন্দরে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। আর জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ৬৭৩৬৪ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসের মধ্যে ৫ মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্বক। অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ০.১৭ শতাংশ ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি হয়। এরপর অক্টোবর, নভেম্বরে পজিটিভ প্রবৃদ্ধি হলেও ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ক্রমাগত ঋণাত্বক প্রবদ্ধি হয়। এর ফলে কাস্টমসের সার্বিক প্রবৃদ্ধিও ক্রমাগত কমে যায়।
তবে মে মাসে রেকর্ড রাজস্ব আদায় কাস্টমসের সার্বিক রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। চলতি জুনে এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে কাস্টমসে ৬৩ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করছেন তারা।