অফিসে না এসেও মিলিয়ন টাকা বেতন নিচ্ছে ডিএসইর সিটিও

অফিসে না এসেও মিলিয়ন টাকা বেতন নিচ্ছে ডিএসইর সিটিও
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চিফ টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) কোন কাজ ছাড়াই বেতন-ভাতাসহ সব ধরণের সুবিধা ভোগ করছেন। ৭ মাসের বেশি সময় ধরে বাধ্যতামূলক ছুটিতে রয়েছেন মো. জিয়াউল করিম। তবে এই সময়ে তিনি গাড়ির জ্বালানিও পুড়িয়েছেন ডিএসইর টাকায়। গাড়ি চালকের বেতন থেকে শুরু করে বাদ পড়েনি কোন সুবিধা। সবমিলিয়ে প্রতি মাসে বেতন-ভাতাসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার সুবিধা নিয়েছেন তিনি। জিয়াউল করিমের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির কোন প্রতিবেদন প্রায় সাত মাসেও আলোর মুখ দেখেনি। এত গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন না করলেও তাঁর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি ডিএসই। আবার তাকে কাজেও ফেরাচ্ছে না সংস্থাটি। বসিয়ে রেখে সিটিওকে লাখ লাখ টাকা বেতন দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, গত বছরের ৩১ অক্টোবর জিয়াউল করিমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আদেশ দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর প্রেক্ষিতে তাকে অবসরে পাঠায় ডিএসই। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখনো জিয়াউল করিমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ডিএসই। একইসঙ্গে প্রযুক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিষয়গুলোতেও পিছিয়ে পড়ছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মো. জিয়াউল করিমকে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করে ডিএসই। বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকলেও ৭ মাস ধরে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তিনি। একাধিক কর্মকর্তা অর্থসংবাদকে জানান, গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার ফলে ডিএসইর আইটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটছে। বিপরীতে এ পদে লোকবল না থাকলেও যদি কার্যক্রম চলে তাহলে গুরুত্বপূর্ণ এ পদটির দরকার কি- এমন প্রশ্ন উঠেছে খোঁদ ডিএসইর কর্মকর্তাদের মাঝে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, ডিএসইর সিটিওকে তদন্ত চলাকালীন সময় পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ছুটিতে রাখতে বলা হয়েছিল। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার পর তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাছান বাবু কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম সাইফুর রহমান মজুমদার অর্থসংবাদকে বলেন, তদন্ত কমিটি করেছে কমিশন (বিএসইসি)। তদন্ত কমিটির কোন প্রতিবেদন ডিএসইর কাছে নেই। সিটিও জিয়াউল করিমকে বাধ্যতামূলক ছুটিতেও পাঠিয়েছে বিএসইসি। তারপরও ডিএসইর পর্ষদ এ বিষয়ে অবগত আছেন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এ বিষয়ে অর্থসংবাদকে বলেন, এমডির দায়িত্ব ডিএসইর পর্ষদে সিটিও’র বিষয়টি এজেন্ডা হিসেবে তোলা। এটি ডিএসইর অভ্যন্তরীন বিষয়। এখানে বিএসইসি কি করবে? জিয়াউল করিমকে কমিশন বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে। এখন ডিএসইর পর্ষদ কেন পদটি এতদিন খালি রাখবে? হয় জিয়াউল করিমকে দায়িত্বে ফিরিয়ে আনবে, অন্যথায় নতুন কাউকে সিটিও পদে নিয়োগ দেবে। এখন যদি আইটিতে কোন সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে দায়ী কাকে করা হবে? এসব অনিয়মের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভুগতে হয়।

প্রসঙ্গত, কারিগরি ত্রুটির কারণে গত বছর একাধিকবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন বন্ধ ছিল। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর কারিগরি ত্রুটির কারণে লেনদেন শুরুর কিছুক্ষণ পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও একই বছরের ৩০ অক্টোবরও ত্রুটির কারণে লেনদেন বন্ধ রাখতে হয় ডিএসইকে। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় বাজার সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর বিএসইসির সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের ত্রুটি নিয়ে বিভিন্ন কমিটি এক্সচেঞ্জটির আইটি কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় বিএসইসি এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডিএসইর চিফ টেকনোলজি অফিসারকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলো।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত