প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য তৈরিতে ঋণ সহায়তা চান উদ্যোক্তারা

প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য তৈরিতে ঋণ সহায়তা চান উদ্যোক্তারা
পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর হলেও প্লাস্টিক শিল্প স্থাপনের জন্য সহজেই ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু বায়োডিগ্রেডেবল উপাদান দিয়ে প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য তৈরি করতে গেলে কোন ঋণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন উদ্যোক্তারা।

বুধবার (২১ জুন) সকালে রাজধানীর পর্যটন ভবনে আরণ্যক ফাউন্ডেশন ও ইনস্টিটিউশন অব ফরেস্টারস বাংলাদেশ (আইএফবি)’র যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা এমন অভিযোগ করেন। তারা বলেন, অর্থায়নের অভাবে বিভিন্ন সময়ে নেয়া পরিবেশ বান্ধব শিল্পোদ্যোগগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে।

‘প্লাস্টিক পল্যুশন ইন ফরেস্টস অ্যান্ড আদার ন্যাচারাল ইকোসিস্টেম: ওয়ে ফরওয়ার্ড’শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা দূষণ বন্ধে সুন্দরবন ও সেইন্ট মার্টিনে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানান।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘প্লাস্টিকসহ অন্যান্য দুষণ থেকে সেইন্ট মার্টিনকে সুরক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব নীতি বাস্তবায়নে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’

টেকসই উন্নয়নের তিনটি শর্ত ইন্ট্রা- জেনারেশন ইক্যুইটি, ইন্টার জেনারেশন ইক্যুইটি ও ট্রান্স-বাউন্ডারি ইক্যুইটির কথা মনে করিয়ে দিয়ে সচিব বলেন, সরকার এখন সবুজ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। দূষণ ও অন্যান্য কারণে বাংলাদেশের বিপন্নপ্রায় প্রজাতিগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে তার মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে দাবি করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, প্লাস্টিক দূষণ কমাতে অবশ্যই সার্কুলার ইকোনমি বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন হিসেবে তৈরি করার নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও ভবিষ্যতে সবুজ শিল্পোদ্যোগের ক্ষেত্রে কর ছাড়সহ অন্যান্য প্রনোদনা দেয়ার ব্যাপারেও তিনি আশ্বাস দেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী। তিনি বলেন পর্যটকদের কারণে সুন্দরবনের গহীনে প্লাস্টিক দূষণ ঘটছে। যার ফলে শ্বাসমুলের নি:শ্বাস প্রক্রিয়া ও বীজ থেকে নতুন চারা উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে শালবনও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বনকে প্লাস্টিকের দুষণ থেকে রক্ষা করতে দায়িত্ববান পর্যটক তৈরি ও সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান প্রধান বন সংরক্ষক।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রকিবুল হাসান মুকুল বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বনে প্লাস্টিক দূষণ বেড়ে চলেছে। পৌরসভাসহ অন্যান্য সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বনে প্লাস্টিক ডাম্পিং করছে। এভাবে অনেক ক্ষেত্রেই প্লাস্টিক বর্জ্যের শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে দেশের বনাঞ্চলগুলো। যার ফলশ্রুতিতে বন, নদী, সাগরসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক বাস্তসংস্থান বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউশন অব ফরেস্টারস বাংলাদেশ (আইএফবি)’র প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। দূষণ কমাতে সকল পর্যায়ে দায়িত্ব বন্টন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের তাগিদ দেন তিনি।

এর আগে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসাইন ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক মোস্তফা ইউসুফ।

প্রবন্ধ দুটিতে জানানো হয়, ২০০৫ সাল পরবর্তী ১৫ বছরে প্লাস্টিকের ব্যবহার ৫ গুণ বেড়েছে। শুধু ২০২০ সালে বাংলাদেশে ৯ লাখ ৭৭ হাজার টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এসব প্লাস্টিকের মাত্র ৩১ শতাংশ পুন:প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে। পৌরসভার ডাম্পিং ও পর্যটকদের প্লাস্টিক উচ্ছিস্টের কারণে বন ও জলাভূমিতে দুষণ বাড়ছে বলে জানানো হয়। প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরে ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পড়ছে। প্রবন্ধে বলা হয়, প্লাস্টিক দুষণ রোধে আন্তর্জাতিক চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সময়ের আগেই প্লাস্টিক দূষণ রোধের ব্যাপারে করণীয় বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জোরালো করার তাগিদ দেয়া হয় প্রবন্ধে।

প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং পর্যটন অনুরাগী ও উদ্যোক্তা অপু নজরুল। প্লাস্টিক দূষণ রোধে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করা, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ট্যুর অপারেটরদের সংযুক্ত করা ও সার্কুলার ইকোনমির প্রচলনের ব্যাপারে মত দেন তারা।

সেমিনারে সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেন।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পেঁয়াজের দামে শঙ্কায় কৃষক, ক্ষুব্ধ ক্রেতা
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি বন্ধ
তিনদিন সেন্টমার্টিনের হোটেল-মোটেল বন্ধ
চিটাগাং সিনিয়রস ক্লাবের নতুন প্রেসিডেন্ট বাবলু
স্থলবন্দর এলাকায় মর্টারশেল, ধ্বংস করলো সেনাবাহিনী
রংপুরের তারাগঞ্জ সভাস্থলে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ফেরি চলাচল শুরু
ময়মনসিংহে মালবাহী ট্রাকে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৪
এক জালে ১৫৯ পোপা মাছ, দাম হাঁকছেন ২ কোটি
রেললাইনের ক্লিপ খুলে নিলো দুর্বৃত্তরা, অল্পের জন্য রক্ষা