রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সবাইকে টিকিটের আওতায় আনা গেলে এ সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি হতো। ২০২২ সালের ঈদুল আজহায় কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ৫ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়। আর এবার ৯ কোটি টাকার বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
ঈদের আগে পাঁচ দিন (২৪-২৮ জুন) কমলাপুর থেকে ৮২টি আন্তঃনগর এবং ৭২টি মেইল-লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। অধিকাংশ ট্রেনে নির্ধারিত যাত্রীসংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি যাত্রী চলাচল করেছেন। রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ঈদের সময় বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহণ রোধ সম্ভব হয় না। ঈদের দুদিন আগে যাত্রীদের যে স্রোত, তা নিয়ন্ত্রণ করা একেবারেই সম্ভব হয় না। রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, ঈদ উপলক্ষ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৪১ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিন ২৯ হাজার যাত্রী চলাচল করেছেন। মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনে কী পরিমাণ যাত্রী চলাচল করেছে, সেটির যথাযথ হিসাব নেই রেলে। এসব ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রী ছিলেন বিনা টিকিটের। কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পাঁচটি স্টেশনের সব কয়টি স্টেশনে এসব ট্রেন বিরতি দিয়েছে। স্টেশনগুলো থেকে হাজার হাজার যাত্রী উঠেছেন। ট্রেনের ভেতর, ছাদ, ইঞ্জিনের দুপাশ পর্যন্ত যাত্রীদের দখলে ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে একেকটি ট্রেনে যে পরিমাণ যাত্রী চলাচল করেন, তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকটি ট্রেনে নির্ধারিত যাত্রীর তিনগুণেরও বেশি চলাচল করেছেন। ইঞ্জিনের দুপাশে যেভাবে যাত্রীরা উঠেন, সামনের দিকটা পর্যন্ত চালক দেখতে পান না। এমন অবস্থা বছরের পর বছর চলছে। এ অবস্থায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই সর্বোচ্চ সতর্কতায় ট্রেন চালাতে হয়। ছাদে ওঠা যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, আমরা নির্ধারিত টিকিটের বিপরীতে ২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট বিক্রি করেছি। চাহিদার চেয়ে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিনা টিকিটি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হয়নি। সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায়ই মাঠে থাকেন।
ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সফিকুর রহমান জানান, রেলে লাফিয়ে লাফিয়ে আয় বাড়ছে। কমলাপুর স্টেশনসহ বিভিন্ন স্টেশনে বিনা টিকিট রোধে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীরাও সচেতন হচ্ছেন। অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রি হওয়ায় টিকিট বিক্রিতে স্বচ্ছতা এসেছে। সবাই টিকিট কাটলে আয় আরও বহু অংশে বেড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলে আয় আরও বাড়বে। ম্যাংগো ট্রেন এবং ট্রেনে গরু পরিবহণ করায় আয় বাড়ছে।
ঢাকা রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির জানান, ঈদযাত্রায় মাত্র পাঁচ দিনে যে পরিমাণ আয় হয়েছে, বিগত কোনো বছরে এ পরিমাণ আয় হয়নি। এছাড়া শুধু স্টেশন থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পুরোপুরি বিনা টিকিট রোধ সম্ভব হলে আয় আরও বাড়বে। আয় বাড়াতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।