করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বুধবার ভার্চুয়ালি এই পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে সংবাদপত্র ও সংবাদ প্রকাশকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজপেপারস অ্যান্ড নিউজ পাবলিশার্সের (ডব্লিউএএন-আইএফআরএ)।
‘সাংবাদিকতায় নিবেদন, নারী অধিকার রক্ষায় অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং ব্যক্তিগত ট্রাজেডি মোকাবিলায় অনুপ্রেরণাদায়ী মর্যাদা ও সংকল্প দেখানোর’ জন্য সংগ্রামী নারীকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
নিজের পত্রিকা ‘এল এক্সপেক্তাদরের’ জন্য আধাসামরিক বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্ত্র কেনাবেচার বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ২০০০ সালে বোগোটার কুখ্যাত লা মোদেলো কারাগারে যাওয়ার সময় বেদোয়া লিমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়।
তিন বছর পর এল তিয়েম্পোর জন্য কাজ করার সময় তাকে আবারও অপহরণ করে আটদিন আটকে রাখা হয়। ওই সময় তাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরানো হয় এবং অর্ধ শতক ধরে রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কলম্বিয়ার গেরিলা বাহিনী ফার্কের নেতাদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। সেখানে লাঞ্ছিত করা হয় ও পেটানো হয়।
সংগ্রামী এই নারী অনেকদিন ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা নিজের মধ্যে চেপে রেখেছিলেন। কিন্তু কলম্বিয়ার সেই অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে যৌন সহিংসতার ঘটনায় অভ্যাসগত ও পদ্ধতিগত দায়মুক্তির নিন্দা জানিয়ে নারী অধিকার রক্ষায় যখন ২০০৯ সালে ‘নো এস হরা দি চালার (আর নিরবতা নয়) শীর্ষক আন্দোলন শুরু করেন তখন তার সেই সব লোমহর্ষক ও বিভৎস অভিজ্ঞতার কথা সামনে আসে।
পুরস্কার গ্রহণ করে বেদোয়া লিমা বলেন, “একজন সাংবাদিকের জন্য এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ও সমর্থন আর হয় না।”
২০০৯ সালে গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বেদোয়া লিমা বলেন, বহু বছর ধরে তিনি তার বিভৎস ও বেদনাদায়ক ঘটনাগুলি নিয়ে মুখ খোলেননি। কারণ ‘সরকার তখন এই অপরাধগুলিকে স্বীকারই করত না।
“এসব ঘটনা কেউই খতিয়ে দেখতে চায়নি, এমনকি এবিষয়ে কথা পর্যন্ত বলতে চায়নি। যখন আমি নিজে মামলা করতে চেয়েছি এবং প্রমাণের জন্য পুলিশ ও হাসপাতালের যোগাযোগ করেছি, ততক্ষণে সব তথ্য-প্রমাণ ধ্বংস করা হয়েছে।”
২০১২ সালে কলম্বিয়ার পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয় তার এই প্রচেষ্টাকে স্বীকার করে নিয়ে তার উপর যে নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন চালানো হয়েছিল, তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে ঘোষণা করে।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্তে ইন্টার-আমেরিকান কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) বেদোয়া লিমাকে ‘ভিকটিম’ ঘোষণা করে প্রায় দুই দশক আগে তার উপর চালানো নির্যাতনের জন্য কলম্বিয়া রাষ্ট্রকে দায়ী করে।
বেদোয়া লিমা কলম্বিয়ায় যৌন নির্যাতনের প্রথম শিকার, যার মামলা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে গিয়েছিল।
২০২০ সালের ইউনেকারো/গিলারমো ক্যানো ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম পুরস্কারও পান বেদোয়া লিমা। ২০১৯ সালের অগাস্টে তিনি ইন্টার-আমেরিকান প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (এসআইপি) থেকে ‘প্রেস ফ্রিডম গ্র্যান্ড প্রিক্স’ পুরস্কার পান।
কলম্বিয়ার লিঙ্গ সহিংসতা ও দায়মুক্তির বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানের ফল হিসেবে নারী অধিকার রক্ষায় তার কাজের জন্য ২০১৬ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর ব্যক্তি বা সংস্থাকে ‘গোল্ডেন পেন অব ফ্রিডম’ পুস্কার দিয়ে থাকে ডব্লিউএএন-আইএফআরএ।