এডিবি অতি সম্প্রতি জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতি বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক। তারা আভাস দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী জুনে শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরে এ দেশের অর্থনীতিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসের তুলনায় এই পরিস্থিতি অনেক ভালো। ওই সময় পোশাকের বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যমানের পোশাকের ক্রয় আদেশ স্থগিত বা বাতিল করে দিয়েছিল, যা ৪০ লাখ শ্রমিক ও হাজার হাজার কারখানাকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক এপিকে বলেন, 'এই মুহূর্তে আমরা বলতে পারি যে, তৈরি পোশাক শিল্প মার্চ-মে সময়ের খারাপ সময় কাটিয়ে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে।'
রুবানা হক বলেন, 'পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা ক্রেতাদের সফলভাবে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এ কারণেই বাতিল হওয়া ৩১৮ কোটি ডলারের ক্রয় আদেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই ফিরে পাওয়া গেছে।'
পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার আয় করে। আর এই পোশাকের বেশিরভাগই যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়, যেখানে শীর্ষে রয়েছে চীন।
গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি যেখানে প্রায় ৮৩ শতাংশ কমে ৫২ কোটি ডলারে নেমে গিয়েছিল, সেখানে জুলাই মাসে তা দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৩৯০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া মে-জুন সময়ে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে রপ্তানি এক বছর আগের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ২৯৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে, যেখানে মূল অবদান পোশাক খাতের। জুলাই ও আগস্ট মিলিয়ে মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫৭০ কোটি ডলারের।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'পোশাক খাত ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের কৃষি খাতও ভালো করছে। রেমিট্যান্স আসছে। এই সবই অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ।'
তিনি বলেন, 'অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। তবে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। আগামী কয়েক মাসে পশ্চিমা দেশগুলোতে মহামারি কী অবস্থা ধারণ করে তার ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে এই পুনরুদ্ধারের গতি।'
আর এটাই এখন অনিবার্য প্রশ্ন। আগামী দিনগুলোতে মহামারি কোন দিকে মোড় নেবে?
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩ লাখ ৪২ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪ হাজার ৮ শ'র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম কারো দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৮ মার্চ।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশি। পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাদের কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের খুব ছোট একটি অংশই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সরকার গত ২৬ মার্চ দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার পর পোশাক খাত প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকে। বন্ধ থাকা কারখানাগুলো আবার ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, 'যথাযথ অর্থনৈতিক প্রণোদনা এবং সামাজিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা' গ্রহণের মাধ্যমে সরকার ভালোভাবে সংকট সামাল দিয়েছে ।
তিনি বলেন, 'রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক এবং আশা করছি অর্থনীতির এই ঘুরে দাঁড়ানো হবে টেকসই, যা প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।'
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট