আমদানিকারকরা বলছেন, এ চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় গম, ভুট্টা, সয়াবিন, বার্লি, সূর্যমুখী তেলের পাশাপাশি সার আমদানি ব্যাহত হবে। সবচেয়ে সমস্যা হবে গম ও সার আমদানিতে। দেশে গমের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। সার আমদানির বড় অংশ রাশিয়া, ইউক্রেনসহ বেলারুশনির্ভর।
সোমবার (১৭ জুলাই) চুক্তি স্থগিতের পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম টনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ ডলার বেড়েছে বলে জানা যায়। একদিনের ব্যবধানে প্রতি টন গমের দাম ২৫০ ডলার থেকে বেড়ে ২৬০-২৬৫ ডলারে উঠেছে।
গত বছরের জুলাই মাসে কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি হয়েছিল। যাতে রাশিয়া ইউক্রেনকে খাদ্যশস্য রপ্তানির অনুমতি দেয়। চুক্তিটি প্রতি দুই মাস পরপর নবায়নের কথা ছিল। গত সোমবার শেষ দফায় এর মেয়াদ শেষ হয়, যা আর নবায়ন হয়নি। রাশিয়ার দাবি, চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর শর্ত পূরণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে দেশের অন্যতম খাদ্যশস্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরী বলেন, নিসন্দেহে এটা আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। এর আগে যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গমের দাম ৩৯০ থেকে ৪২০ ডলার হয়েছিল, যা চুক্তির পরে ক্রমাগত কমে এখন কিছুটা স্থিতিশীল হচ্ছে। এমন সময় চুক্তি বাতিল শঙ্কার।
তিনি বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে যে পরিমাণ গম মজুত আছে, তাতে দুই-তিনমাস চলবে। কিন্তু ক্রমাগত বিশ্ববাজারে দাম বাড়তে থাকলে আগামী দিনগুলোতে বিশ্ববাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। যার প্রভাব পড়বে দেশের বাজারে।
আকিজ ইনসাফ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার সাহা বলেন, আমাদের গম আমদানির বেশিরভাগই কৃষ্ণসাগরের দেশগুলো থেকে। ওই চুক্তির পরে আমরা সুফল পেয়েছি। যেটা বেশিদিন টিকলো না।
এ বিষয়ে পণ্য সরবরাহ বিশেষজ্ঞ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশিদুল হাসান বলেন, গম, ভুট্টা, বার্লি, সয়াবিন, সূর্যমুখীর উৎপাদন দেশে খুব একটা না থাকায় এগুলো আমদানিনির্ভর। সেটাও কৃষ্ণসাগরের দেশগুলো থেকে। এ চুক্তি বাতিলের ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যগুলোর দাম বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে দেশের ভোক্তাদের ওপর।
তিনি বলেন, চুক্তিটি স্থানীয় বাজারে দাম কমাতে কিছুটা সাহায্য করেছিল। এ চুক্তি হওয়ার আগে কিন্তু গম ও সারের দাম আমরা অস্থিতিশীল হতে দেখেছি। এমনকি গমের কারণে বেকারি পণ্যগুলোর দামও বেড়েছিল।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে টানা তৃতীয়বারের মতো দেশে গম আমদানি কমেছে। বেশি দামের কারণে ক্রেতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ডলার সংকট ও এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তির সমস্যার কারণে এমনটা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গমের আমদানি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছিল ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টনে। আগের বছর তা ছিল ৪০ লাখ ১২ হাজার টন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর এমওপি সারের চাহিদা প্রায় আট লাখ টন। যার প্রায় ৬০ শতাংশ আমদানি হতো রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশ থেকে। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে এ দুটি দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর কানাডাসহ অন্য দেশ থেকে প্রয়োজনীয় সার আমদানিতে তৎপর হয় বাংলাদেশ। তবে আমদানি সংকটের কারণে দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করে সরকার।
এ চুক্তি হওয়ার পরে আবারো রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে সার আমদানি শুরু হয়েছিল। তবে এ চুক্তি বাতিলে এখন কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে কৃষি মন্ত্রলাণয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং উপ-প্রধান (কৃষি অর্থনীতিবিদ) শেখ বদিউল আলম বলেন, নতুন করে ইউক্রেন থেকে এমওপি নেওয়ার কোনো চুক্তি নেই। কানাডা থেকে আট লাখ টন সার নেওয়ার চুক্তি হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে এ সারের কোনো ঘাটতি হবে না।