সূত্র মতে, গত বছরের (২০২২ সাল) জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আজিজ পাইপসের উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন চলতি বছরের জুন মাসে। তবে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে কোম্পানিটি কোন ঘোষণা দেয়নি। এক্ষেত্রে এক প্রকার তথ্য গোপন করলেও কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণ কমেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ হিসাববছর (৩০ জুন, ২০২২) শেষে আজিজ পাইপসের উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে কোম্পানির ২৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার ছিল। চলতি বছরের মে মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ কমে ২০ দশমিক ০৭ শতাংশে দাঁড়ায়। অর্থাৎ ১১ মাসে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে। এদিকে চলতি বছরের জুন মাসে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ আরও কমে যায়। ৩০ জুন পর্যন্ত উদ্যোক্তা পরিচালকরা ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছেন। অর্থাৎ জুন মাসেই আজিজ পাইপসের উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। আর এক বছরে বিক্রি করেছেন ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার।
[caption id="attachment_219599" align="aligncenter" width="1200"] ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দেওয়া আজিজ পাইপসের শেয়ার ধারণের তথ্য[/caption]
জানা গেছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী- তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর আলাদাভাবে প্রত্যেক পরিচালককে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হয়। তবে আজিজ পাইপস আগে থেকেই ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করে বিএসইসির সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। নতুন করে কোন ঘোষণা ছাড়াই নিয়ম বহির্ভূতভাবে আরও শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালকরা। প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটিকে এ অনিয়মে স্বয়ং ডিএসই এবং সিডিবিএল সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার লকইন রাখে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ। এসব শেয়ার লক ফ্রি করতে হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমতি নিতে হয় সংস্থাটিকে। লকইন শেয়ার বিক্রি করতে পারে না উদ্যোক্তা পরিচালকরা। তবে গত এক বছরে আজিজ পাইপস কিভাবে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেছে সেটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ডিএসই এবং সিডিবিএল আজিজ পাইপসকে অনিয়মে সহযোগিতা করেছেন। কারণ তাদের সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবেই লকইন শেয়ার বিক্রি করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে জানতে আজিজ পাইপসের কোম্পানি সচিব মো. মকবুল হোসাইনকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমি এখন গাড়িতে আছি। আগামীকাল কথা বলতে পারবো।
জানতে চাইলে সিডিবিএলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল মোতালেব অর্থসংবাদকে বলেন, শেয়ার লক-আনলক করার দায়িত্ব এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। আমরা শুধুই প্ল্যাটফর্মটা দিয়ে থাকি। ইস্যুয়ারের কে পরিচালক বা উদ্যোক্তা তা তো আমরা জানতে পারি না। মনিটরিংয়ের পুরো দায়িত্ব ডিএসইর।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার অর্থসংবাদকে বলেন, কোন ঘোষণা ছাড়া উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কিভাবে কমেছে সেটি দেখতে হবে। অনেক সময় পরিচালনা পর্ষদের কেউ মারা গেলে শেয়ার স্থানান্তর করা হয়। যিনি মারা গেছেন তিনি বোর্ডে ছিলেন, আবার যার কাছে শেয়ার স্থানান্তর করা হয়েছে তিনি পর্ষদে নেই। তখন উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমতে পারে। কোন উদ্যোক্তা বা পরিচালকের শেয়ার হস্তান্তর করলে তো ডিএসইর ওয়েবসাইটে ঘোষণা থাকার কথা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটার কোন রিকনসিলেশন আছে কি না, সেটি অফিস টাইমে দেখতে হবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, কোন ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে আইন ভঙ্গ করা। ঘোষণা ছাড়া উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কেন কমলো এটা ডিএসই শোকজ করতে পারে। এটা দেখার দায়িত্বই হচ্ছে ডিএসইর। আর ডিএসই এ বিষয়ে কেন সঠিক জবাব দিতে পারবে না? তারা (ডিএসই) পাবলিক প্রতিষ্ঠান, তাদেরকেই জবাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছে উদ্যোক্তারা। বন্ধ কারখানার শেয়ারের দামও ওপরে তোলা হয়েছে। এমন বহু কোম্পানি আছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, আজিজ পাইপসের শেয়ারহোল্ডিং পজিশন পাওয়ার পর বিষয়টি বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ খতিয়ে দেখবে।