গবেষণাটি পৃথিবীর নানা প্রান্তের প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার মানুষের ওপর পরিচালনা করা হয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতিদিন চার হাজার কদম হাঁটলে অপরিণত বয়সে মৃত্যুর যে ঝুঁকি, সেটি কমতে থাকে।
আর প্রতিদিন ২৩০০ কদমের বেশি হাঁটলে সেটি হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীর জন্য বেশ উপকারী। এক কথায় বলতে গেলে, প্রতিদিন হাঁটাহাঁটির পরিমাণ যত বাড়বে; সেটি দেহের জন্য ততটাই মঙ্গলজনক হবে।
গবেষণা অনুযায়ী, দৈনিক ৪ হাজার কদম থেকে শুরু করে হাঁটার অভ্যাস প্রতি ১ হাজার কদম বাড়ানোর সাথে সাথে অপরিণত বয়সে মৃত্যুঝুঁকির সম্ভবনা আরও কমতে থাকে। আর সেটি ২০ হাজার কদম পর্যন্ত পৌঁছালে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ১৫ ভাগ পর্যন্ত কমে আসতে পারে।
মূলত পোল্যান্ডের মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ লডজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের দলের গবেষণায় জেন্ডার, বয়স ও স্থানভেদে হাঁটার এ উপকারিতার তথ্য উঠে এসেছে। তবে হাঁটাহাঁটির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উপকারিতা দেখা গিয়েছে ৬০ বছর বয়সের নিচের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।
লডজ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ম্যাসিজ বানাচ মনে করেন, রোগ-বালাইয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে উন্নত মেডিসিন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। তবে এটাই একমাত্র সমাধান হওয়া উচিত নয়।
ম্যাসিজ বানাচ বলেন, "আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের সবসময় লাইফস্টাইল পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়া উচিত। যেমন, ডায়েট ও ব্যায়ামের মতো বিষয়গুলো। এগুলোই গবেষণায় আমাদের বিশ্লেষণের মূল ফলাফল। এর ফলে হৃদযন্ত্রের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অনেক সময় কার্যকর হতে পারে।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, পর্যাপ্ত পরিমাণে শারীরিক কসরত না করার ফলে প্রতি বছর ৩২ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
ট্রেইনার ও ইন্সট্রাক্টর হানি ফাইন আবার অনেক বেশি সময় বসে কাটানোর ফলে দেহে যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়, সেটির ওপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, "এর ফলে হজমশক্তি কমে যেতে পারে এবং পেশির বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পেশী শক্তিকে ব্যাহত করতে পারে। যার ফলে দেহে ব্যাথা অনুভূত হয়।"
হানি ফাইন আরও বলেন, "অনেক বেশি সময় ধরে বসে থাকার ফলে পিঠের নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। অফিসে চাকরি করা ব্যক্তিদের এ ধরণের সমস্যা বেশি দেখা যায়। একনাগাড়ে বসে থাকার ফলে তাদের পিঠে ক্রমাগত চাপ পড়ে যা পরবর্তী জীবনে বহু রোগের সৃষ্টি করে।"
তাই হানি ফাইন শক্তি কিংবা ক্যালরি ব্যয় হয় এমন সব কাজ করার দিকে গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, "দাঁড়িয়ে থাকা, শপিং করা, মেঝে পরিস্কার করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে আমরা কর্মক্ষম থাকতে পারি। ফলে আমাদের দেহ থেকে আরও কার্যকরীভাবে ক্যালরি ব্যয় হয়।"
হানি ফাইন মনে করেন, জীবনে হাঁটার অভ্যাস তৈরি করা হয়তো একটু কঠিন। তবে একবার এ অভ্যাস করতে পারলে পরবর্তীতে এর ফলাফল বেশ ইতিবাচকভাবে পাওয়া যাবে।
হানি ফাইন জানান, হাঁটাহাটির ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। হাড়ের প্রতিরক্ষার জন্য পেশীকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও দেহে শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। এমনকি ব্যক্তিকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতেও এটি সহায়তা করে।
তবে হাঁটাহাঁটির ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে। যেমন, স্বল্প দূরত্বের বাস কিংবা ট্রেন স্টেশনে যাওয়ার সময় গাড়ি না নিয়ে বরং হেঁটে যাওয়া যেতে পারে। ডেস্কে কাজ করার সময় নির্দিষ্ট সময় পর চেয়ার থেকে উঠে এদিক সেদিক একটু চলাচল করা যেতে পারে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে আবার হাঁটাহাঁটির অভ্যাস আরও বেশি উপকারী।
অনেকেই আবার পডকাস্ট শুনতে ভালবাসেন। সেক্ষেত্রে হেডফোনে সেটি শুনতে শুনতে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটা যেতে পারে। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে গল্প করতে করতে হাঁটা বেশ কার্যকরী।
ব্যক্তিজীবনে হাঁটাহাঁটির অভ্যাসটি হয়তো একদিনে হবে না। এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে কদমের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। হয়তো প্রথমে ১০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস তৈরি হবে। এরপর ধীরে ধীরে সেটা বৃদ্ধি করে ২০ মিনিট; এমনকি ৩০ মিনিট পর্যন্তও করা যেতে পারে।
অর্থসংবাদ/এমআই