কয়েক মাস যাবত অধিকাংশ ব্যাংক তারল্য সংকট বা নগদ টাকার সংকটে ভুগছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা কমাতে ব্যাংকগুলো হঠাৎ তারল্য সংকটের মুখে পড়েছে। গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে নিয়মিত নির্দেশনা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে শরিয়া ধারার কয়েকটি ব্যাংকসহ দুর্বল ব্যাংকগুলোকে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা তারল্য সহায়তাও দেওয়া হয়।
কিন্তু তারপরও তারল্য ঘাটতি কাটছে না। এই অবস্থায় ব্যাংকে তারল্য বিষয়ে নজরদারির লক্ষ্য বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কারিগরি সহায়তা দল।
ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটের নেপথ্যে কী তা জানতে চেষ্টা করছে আইএমএল দল। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের ২৪টি প্রাইমারি ডিলার (পিডি) ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে নিজেরাও পরামর্শ দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন নিয়ে তাঁরা সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজেমী সেন্টারে আয়োজিত রেপ–আপ বৈঠকে আইএমএফের সাউথ এশিয়া রিজিওনাল ট্রেইনিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স সেন্টারের (এসএআরটিটিএসি) মনিটরি অ্যান্ড ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন অ্যাডভাইজার ওলেগ চুরিয়ার নেতৃত্বাধীন দল এসব বিষয় তুলে ধরেন।
এই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ড মো. হাবিবুর রহমান, গবেষণা বিভাগ সম্পর্কিত নির্বাহী পরিচালক মো. জুলহাস উদ্দিন ও ড মো. এজাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চলতি অর্থবছরের চালুকৃত স্মার্ট সুদ হার, ইন্টারেস্ট রেট করিডরের মাধ্যমে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন নিয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফের ঢাকায় সফররত দল। পাশাপাশি ডলারের একক দাম বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন আইএমএফের কর্মকর্তারা।
সংস্থাটি বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবায়ন, প্রকৃত রিজার্ভ, পরিচালকদের ঋণ, খেলাপি ঋণ আদায়, ঋণ আদায়ে চলমান মামলার হালনাগাদ তথ্যের আলোকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সেগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে পরামর্শ বিনিময় করা হয়েছে।
এর আগে গত ৬ আগস্ট আইএমএফের কারিগরি সহায়তা দল বাংলাদেশে আসে। তাঁরা বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে। সফরের অংশ হিসেবে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাঁরা গিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে। পরবর্তী সেপ্টেম্বরে নতুন দল আসার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনে চিরাচরিত নিয়ম মেনে চলে। সেই নিয়ম অনুযায়ী তারল্য, সুদের হার ও ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট প্রভৃতি ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করে।’
গত ১৮ জুন চলতি অর্থবছরের ষান্মাসিক (জুলাই–জানুয়ারি) মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নীতি সুদহারের করিডর প্রথা, সুদহারের সীমা প্রত্যাহার, ডলারের একক দাম, রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়ণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে ছিল। পুরো মুদ্রানীতিটি হয়েছে আইএমএফের ছক অনুযায়ী।
অর্থসংবাদ/এসএম