চীন এখন বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আসার পর কৌশলগত সম্পর্ক আরও ব্যাপকমাত্রায় গতি পায়। চীন বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে নানা বড় অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করছে। দেশে ছোট-বড় ও মাঝারি মিলিয়ে চীনের অর্থায়নে অন্তত ২৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশে চীনের বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে ৯টি, যেগুলোতে দেশটির বিনিয়োগের পরিমাণ ৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। এর প্রায় ৭০ শতাংশই বিনিয়োগ হয়েছে চীন সরকারের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ-বিআরআইয়ের অধীনে।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী একক দেশ হিসেবে চীন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথম অবস্থানে রয়েছে জাপান। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ২৭টি প্রকল্পের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের ৯টি বড় প্রকল্পের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। প্রকল্পগুলোর অধীনে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
চীনের আরেকটি কোম্পানি এখন দুটি মেগাপ্রকল্পের জন্য ১ লাখ কোটি টাকা বা প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন করে কেরানীগঞ্জ ও আশুলিয়ায় দুটি উদ্ভাবনী স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে এই বিশাল বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিংয়ের প্রকৌশল ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি)। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসংলগ্ন কেরানীগঞ্জ ওয়াটারফ্রন্ট স্মার্ট সিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া আশুলিয়ার তুরাগ নদের বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল সংরক্ষণ ও কমপ্যাক্ট টাউনশিপ গড়ে তুলতে প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। সূত্র জানিয়েছে, সিআরবিসির অর্থায়নে ইতোমধ্যে প্রকল্প দুটির সম্ভাব্যতা যাচাই ও পরিবেশগত সমীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।
চীনা ঋণে নেওয়া বৃহৎ ৯ প্রকল্পের মধ্যে সব শেষ প্রকল্পটি ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে শেষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন খাতে ঋণ ও অনুদান হিসেবে মোট ১ হাজার ৭৭ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন।
যার মধ্যে প্রায় ৬৯৪ কোটি ডলার ইতোমধ্যে ছাড় হয়েছে। অনুদান হিসেবে এসেছে খুব সামান্য। সিংহ ভাগই ঋণ। এসব ঋণের বেশির ভাগই এসেছে গত দুই দশকে।
বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে চীন এবং আমেরিকার মধ্যে চলছে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ। ভবিষ্যতে তারা আমেরিকার জায়গাটা দখলের স্বপ্ন দেখে। তবে সেটি করতে গেলে তাদের মিত্র জোগাড় করতে হবে। আমেরিকার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর বেশির ভাগই হলো ইউরোপের দেশসমূহ। চীন একইভাবে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অপেক্ষাকৃত গরিব এবং অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে তাদের নিজের শিবিরে টানার চেষ্টা করছে।
এর অংশ হিসেবে সারাবিশ্বে প্রভাব বিস্তার করতে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে এই উদ্যোগের সঙ্গে পৃথিবীর অন্তত ৬৮ দেশ যুক্ত হয়েছে। উদ্যোগটি শেষ হবে ২০৪৯ সালে।
অর্থসংবাদ/এসএম