ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) পুরোপুরি সংশোধন করার আগে ব্যবসায়ীদের যেন হয়রানি করা না হয়, সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বারে আয়োজিত ‘ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং টেকসই নগরায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ফ্ল্যাট ও জমি রেজিস্ট্রেশনে করারোপের কারণে জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি বেশ কমে গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এনবিআর কাজ করছে। আশাকরি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সচিব আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ কৃষিজমি সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর নগর আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের জলবায়ু, নদী মরাত্মকভাবে দূষণ করছে, যার প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বিশেষত অবকাঠমো উন্নয়নে মান নিশ্চিত করতে হবে, যেন এর মাধ্যমে পবিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে নগরায়ন এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেখানে আমাদের জিডিপির ৬৫ শতাংশ আসছে শহরাঞ্চল থেকে। ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়নের জন্য আমরা যানজট, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ প্রভৃতি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি, একই সঙ্গে আমাদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে জ্বালানি খরচ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিও। এ অবস্থায় ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা নীতি গ্রহণ করা সময়ের দাবি বলে মত প্রকাশ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি এবং ভিত্তি স্থপতি বৃন্দ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি ইকবাল হাবিব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩৩ শতাংশ লোক নগরে বাস করেন এবং ঢাকা মহানগরীতে প্রতিবছর নতুন করে পাঁচ লাখ লোক যোগ হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য প্রতিনিয়ত গৃহহীন জনসংখ্যা বাড়ছে। আমরা বর্জ্য, পানি ও বায়ুদূষণ এবং বৃক্ষনিধন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা, যানজট ও স্বাস্থ্য সংকটের শিকার হচ্ছি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থপতি অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, মানুষের ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতা হ্রাসে বাইরের জনগণের জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা অতিদ্রুত কৃষিজমি হারিয়ে ফেলছি, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষিজমি সুরক্ষায় আমাদের আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকা শহরের জন্য একটা ভিশন প্রয়োজন এবং এজন্য সুশাসনের পাশাপাশি জনগণের সম্পৃক্ততা একান্ত অপরিহার্য। রাজউকের পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিটি শহরের মাস্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ঢাকা শহরের নগরায়নে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। তাই এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তয়নের ক্ষেত্রে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। তিনি দেশের নগর পরিকল্পনাবিদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে আরও সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা যানজট নিরসনে বহুতলবিশিষ্ট পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংখ্যা বাড়ানো, বুড়িগঙ্গা নদীর নাব্য ও ব্যবহার উপযোগিতা বৃদ্ধি, পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে শিল্প-কারখানা স্থানান্তরে অবকাঠমো উন্নয়ন ও প্রণোদনা সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেন।