দেশে খাদ্যের অভাব নেই এবং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য মজুত আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বাজারেও জিনিসপত্রের অভাব নেই বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি, এখন এমন একটা সময়, মুদ্রাস্ফীতি, কিছু মানুষের অবশ্যই কিছু কষ্ট হচ্ছে, তবে জিনিসের কিন্তু অভাব নেই, এটা আমি বলতে পারি। উৎপাদনে কিন্তু ঘাটতি নেই এবং উৎপাদনের যে জায়গা দরকার, আমরা কিন্তু সব ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, বাজারে কোনো জিনিসের কিন্তু অভাব নেই। মাঝে মাঝে মনে হয়, কৃত্রিম উপায়ে কিছু মূল্য বাড়ানো হয়, ইচ্ছে করে বাড়ানো হয়। অনেক সময় গোডাউনে রেখে দেয় বা একটা খেলা খেলে। এটিই হলো বাস্তবতা। কিন্তু আমরা পদক্ষেপ নিলেই তা আবার কমে আসে। ইতোমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীকে আমি বলেছি প্রত্যেকটি বাজার মনিটর করতে, দেখতে। অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আমি বলেছি বিশেষভাবে দেখার জন্য।
তিনি আরও বলেন, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি যাতে না হয়, সেজন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অন্যান্য দেশ যেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে, আমরাও নিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংকের সুদ হার বাড়ানো, সেটা আমরা বাড়িয়ে দিয়েছি, ধীর ধীরে বাড়ানো হচ্ছে। টাকা কিন্তু ছাপানো হচ্ছে না। অনেকে বলছে, টাকা ছাপিয়ে টাকা ছড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো কিন্তু একদম বন্ধ করে দিয়েছি, টাকা ছাপানো হবে না। সরকারি ব্যয় কমানো হয়েছে, কৃচ্ছ্রতা সাধন করা হচ্ছে। জরুরি কারণ ছাড়া কাউকে বিদেশে যেতে দিচ্ছি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডলার সংকট শুরু হয় ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। ডলার সংকট যেন কমে, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। নির্দেশ দিয়েছি আমদানির ক্ষেত্রে বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য যাচাই করতে। আগে যেমন ইচ্ছেমতো খোলা হতো, সেই সুযোগ এখন আর নেই। সে জন্য কিছু ব্যবসায়ী, তারা বিপদে পড়ে যায়, ঠিক বিপদ না, টাকা পাচারের সুযোগটা কমে যায়, সেই চিৎকার কিছুদিন শুনেছি।
তিনি বলেন, ব্লুমবার্গের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এখন এলসি খুলতে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য আমাদের আমদানিতে যে অতিরিক্ত অর্থটা ব্যয় হতো, তা কিন্তু অনেকাংশে কমে গেছে। একটা হিসাব আমাদের কাছে আছে, তা প্রতিনিয়ত মনিটর করা হচ্ছে। এর জন্য আমাদের ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। কার্ব মার্কেটে অবৈধ ডলার কেনাবেচা নিবিড়ভাবে মনিটর করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে কিন্তু আমরা টাকা দিচ্ছি, যাতে আমার দেশের মানুষের কষ্ট না হয়। রিজার্ভটা কি? যাতে তিন মাসের আমদানির খরচটা থাকে। এর বেশি থাকার যে প্রয়োজন আছে তাও না। কাজেই এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করকার কোনো মানে হয় না। ভারতের সঙ্গে আমরা যে কেনাবেচা করব, এই লেনদেনটা করব নিজস্ব অর্থে, ডলারে না। এটি আমরা ইতোমধ্যে করে ফেলেছি। এতে আমাদের ডলারের চাপটা কমে যাবে।
তিনি বলেন, খাদ্যের বিষয়ে বলব, আমাদের কিন্তু খাদ্যের অভাব নেই। আমাদের এখন যে খাদ্যের মজুত রয়েছে, চাল আমাদের এতো বেশি পরিমাণ, যখন সংগ্রহ শুরু করলাম তখন রাখার জায়গা নেই। যাদের আমরা প্রতি মাসে খাবার দিই, সামাজিক নিরাপত্তায় যাদের খাবার দিই, আমরা তাদের দুই মাসের করে, তিন মাসের করে এক সঙ্গে দিয়ে জায়গা করেছি। এই মুহূর্তে আমাদের রিজার্ভ চাল আছে ১৭ লাখ টন। আর গম এক লাখ ৭৭ হাজার টন। কিন্তু আমাদের চাহিদা কিন্তু এত না। আমাদের ১২ লাখ টন হলেই হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের কাছে এখন অতিরিক্ত খাবার আছে।
অর্থসংবাদ/এসএম