বর্তমানে সকালে সর্বনিম্ন প্রতিটি মিল ১৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দুপুর ও রাতে সর্বনিম্ন ৩০ এবং সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় খাবার পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌফিক আলম বলেন, খাবারের দাম বাড়লেও মান বাড়ার কোন লক্ষণ নেই, উপরন্তু মান আরো কমছে। আর এই যে ভাত, এসব এখন নিম্নশ্রেণির মানুষও খায় না। যে খাবার আমাদের দেওয়া হচ্ছে, তা একজন শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত না। আমাদের দাবি খাবারের মান ও ভর্তুকি বাড়ানো হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, আমরা যখন ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে আসি তখন খাবারের মান ভালো ছিল, আর দাম সাধ্যের মধ্যে ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল প্রশাসন দিনের পর দিন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়িয়ে চলছে। যেখানে তার সুষম খাদ্য নিশ্চয়তা নেই সেখানে সে কীভাবে শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবন শেষ করবে এবং শিক্ষাজীবন শেষে ভালো একটি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হবে! অসুস্থ শিক্ষার্থী ও সমস্ত শিক্ষার্থী এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের উচিত একটি সহনীয় দাম ঠিক করা এবং সেই দামে তাদের খাবার সরবরাহ করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সূত্র জানা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তি প্রায় ২৪০০ কিলোক্যালরি ব্যয় করে প্রতিদিন। অর্থাৎ, কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, স্নেহ জাতীয় উপাদানের অনুপাত ৪:৪:১ প্রয়োজন যা আবাসিক হলের খাবারের মানের সাথে সামঞ্জস্য নয়। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ব্যালেন্স ফুড না হওয়ায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে পারে শিক্ষার্থীরা।
লালন শাহ্ হলের ডাইনিং ম্যানেজার সাবু বলেন, খাবারের মান বাড়াতে ভালো চালের ভাত, সবজি, সালাদ দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করেছি। ছাত্রদের কাছে থেকে যদি আমি ২-৩ টাকা বেশি নিয়েও থাকি সেক্ষেত্রে তাদের সেই অনুযায়ী খাবার দেওয়া হবে।
এবিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, আমরা সুষম খাদ্য ও সেই সাথে খাবারের সঠিক মান এবং দামের সামঞ্জস্যতা চাই। করোনা ও করোনা পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেশি দাম দিয়ে খাবার কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
এদিকে লালন শাহ্ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো: আকতার হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম যে হারে বেড়েছে সে তুলনায় মিল প্রতি ২ টাকা বৃদ্ধি কিছুই না। হলের খরচ থেকে ভর্তুকি চালানো কিছুটা কঠিন হয়ে যায়।
খাবারের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, খাবারের দাম বৃদ্ধি আসলে কোন সুখকর কথা না। তবে আমরা বাধ্য হয়েই দাম বৃদ্ধি করেছি। আমরা আশাবাদী এই মূল্য বৃদ্ধির ফলে খাবারের মান কিছুটা হলেও বাড়বে।
উল্লেখ্য, অক্টোবর, ২০২৩ এর প্রথম দিন থেকে এই মূল্যতালিকা কার্যকর করা হয়। এর আগে ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে প্রভোস্ট কাউন্সিলের ১১১তম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে খাবার তালিকা ও মূল্য পুনঃ নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। সে সময় হলগুলোতে সকালে খাবারের মূল্য ১০ টাকার পরিবর্তে ১২ টাকা, দুপুর ও রাতে ২২ এর পরিবর্তে ২৫, ২৫ এর পরিবর্তে ২৮, ৩৫ এর পরিবর্তে ৩৮ টাকা করা হয়।
অর্থসংবাদ/এমআই