স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে বাড়বে আর্থিক ঝুঁকি

স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে বাড়বে আর্থিক ঝুঁকি
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশের ব্যাংক খাত এখন চাপের সম্মুখীন। বৈশ্বিক পরিস্থিতিও এখন আর্থিক দিক থেকে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির মুখে। এ ঝুঁকির কারণে আগামীতে আর্থিক খাতে বড় ধাক্কা আসতে পারে। ধাক্কা মোকাবিলার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। আইএমএফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রায় সব দেশেরই আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান কমেছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতে প্রায় সব দেশ সুদের হার বাড়াচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন ডলার সংকট, সুদের হার বৃদ্ধি, চড়া মূল্যস্ফীতি, তারল্য সংকটে ভুগছে।

আগামীতে এ সংকট আরও প্রকট হতে পারে। কারণ এসব কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। তারা বিনিয়োগ করছেন না। অনেকের বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে গেছে। কারণ বৈশ্বিক মন্দায় পণ্যের বিক্রি কমায় উদ্যোক্তারাও এখন তারল্য সংকটে পড়েছেন।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো বিনিয়োগ বাড়ানো। এর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। তাহলে একদিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। অন্যদিকে ভোক্তার আয় বাড়বে। কিন্তু বিনিয়োগ বাড়ানো যাচ্ছে না। এছাড়া অনেক দেশেই এখন পণ্যমূল্য বাড়ছে। একই সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রার মান কমছে, বাড়ছে ডলারের দাম। এসব কারণে অনেক দেশে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ওই সময় পর্যন্ত তাদের মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘করোনা মহামারির পর যুক্তরাষ্ট্র আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। অন্য কোনো দেশ এখনো যেতে পারেনি। তবে কিছু দেশের জন্য ২০২৫ সাল পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে খাদ্য পরিস্থিতি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দর্যোগের কারণে খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ায় এখনো ৩৪টি দেশ খাদ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এতে খাদ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে খাদ্যের দাম বাড়ছে। যদিও অনেক পণ্যের দাম গত জুলাইয়ের পর থেকে কমছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ আগের মতো স্বাভাবিক হয়নি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখনো ভোক্তাকে ভোগাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির ধারা এখনো অব্যাহত থাকায় তা বিনিয়োগকারীদের আক্রান্ত করছে। তারা বিনিয়োগ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে সুদের হার বাড়ার কারণে বিনিয়োগ আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। এ প্রবণতা সমাজে দরিদ্র মানুষকে আরও বেশি আঘাত করছে। আগামীতে এ আঘাতের প্রবণতা আরও বাড়বে। কারণ মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে সুদের হার বাড়ানোর প্রবণতা আরও দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে হবে। যা বৈশ্বিক বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বৈশ্বিকভাবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এখন জ্বালানি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবসহ ওপেক দেশগুলো জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে জ্বালানি সরবরাহের নতুন চুক্তি হয়নি। ফলে এ খাতের পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা বিশ্বকে নতুনভাবে ভোগাবে।’ আইএমএফের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিছু বলা না হলেও নিম্নআয়ের দেশগুলো সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেননা বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোও এখন বড় ধরনের চাপে রয়েছে। ডলার সংকট, তারল্য সংকট প্রকট। বিনিয়োগ কম হওয়ায় ও ঋণ আদায় হ্রাস পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয় কমে গেছে।

অর্থসংবাদ/এমআই

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ