এই জিপ গাড়ি কিনতে নিয়মিত বরাদ্দের অতিরিক্ত ৩২০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২)-এ উল্লেখিত মূল্যসীমার বেশি দামে কেনার নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হবে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বুধবার (১১ অক্টোবর) মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক হবে। ওই বৈঠকেই এই অনুমোদন চাওয়া হবে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ডিসি ও ইউএনওদের জন্য সর্বাধুনিক মডেলের বিলাসবহুল ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে আগেই যানবাহন অধিদপ্তরের চাহিদাপত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন পিপিআর’র মূল্যসীমার অতিরিক্ত দামে এসব গাড়ি কেনার জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হবে।
এদিকে ২৬১টি গাড়ি কেনার জন্য যানবাহন অধিদপ্তরের চাহিদাপত্র জনপ্রশাসনের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই চাহিদাপত্র অনুযায়ী, ডিসিদের জন্য গাড়ি কেনা হবে ৬১টি। প্রতিটি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে এক কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। এতে ৬১টি গাড়ি কিনতে মোট ব্যয় হবে ৮৮ কোটি ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা।
আর ইউএনওদের ব্যবহারের জন্য কেনা হবে ২০০ গাড়ি। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে ২০০টি গাড়ি কিনতে মোট লাগবে ২৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে এসব গাড়ি কেনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব জিপ গাড়ি কেনার যৌক্তিকতা হিসেবে চাহিদাপত্রে উল্লেখ করা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ মাঠপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন সেবা নিশ্চিত করতে এসব গাড়ির প্রয়োজন হবে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ ২ জুলাই সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব প্রকার যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনা জারি করে সরকার।
সেই সঙ্গে পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান, জলযান, আকাশযান খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। তবে ১০ বছরের অধিক পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করার সুযোগ দেওয়া হয়।
এছাড়া পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করার সুযোগ থাকে।
সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে এক মাস না যেতেই আগস্টের শুরুতেই সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আবার গাড়ি কেনার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এমনকি গাড়ির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া হয় আগের থেকে। আগে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য সর্বোচ্চ ৯৪ লাখ টাকা দামের গাড়ি কেনা যেতো। নতুন নির্দেশনায় এই বাজেট বাড়িয়ে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের গ্রেড ১ ও ২ পর্যায়ের কর্মচারী এই গাড়ি কিনতে পারবেন। আর গ্রেড ৩ বা তার চেয়ে নিম্নপর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য কেনা যাবে ৬৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি। আগে তাদের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৫৭ লাখ টাকা।
সরকারের এই গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তের মধ্যে কার, জিপ, পিকআপ, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, কোস্টার, মিনিবাস (এসি), মিনিবাস (নন এসি), বাস, ট্রাক রয়েছে।
এরমধ্যে ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে ১৬০০ সিসির কার, ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ ২০০০ সিসির জিপ, ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ ২৫০০ সিসির পিকআপ (সিঙ্গেল কেবিন), ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে ২৫০০ সিসির পিকআপ (ডাবল কেবিন), ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ ১২৫ সিসির মোটরসাইকেল, ৫২ লাখ টাকা দিয়ে ২৭০০ সিসির মাইক্রোবাস, ৫৪ লাখ টাকা দিয়ে ২৭০০ সিসির অ্যাম্বুলেন্স, ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে ৪২০০ সিসির কোস্টার/মিনিবাস (এসি), ৩২ লাখ টাকা দিয়ে ২৭৭১ সিসির মিনিবাস (নন এসি), ৪৬ লাখ টাকা দিয়ে ৫৮৮৩ সিসির বাস (বড়, নন এসি), ৩৯ লাখ টাকা দিয়ে ৫ টনের ট্রাক এবং ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ৩ টনের ট্রাক কেনা যাবে।
অর্থসংবাদ/এসএম