আছে কি বাংলাদেশের শিশু বিদ্যালয়ে এমন কোনো শিক্ষক বা শিক্ষাপদ্ধতি চালু, যেখানে চর্চা হচ্ছে এমন মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা? অথবা সেই ভাবে তৈরি হচ্ছি কি তেমন শিক্ষক যিনি পারবেন মোকাবেলা করতে ভবিষ্যতের এই শিক্ষাব্যবস্থাকে? যদি না থেকে তাহলে কি আমরা যেভাবে আছি ঠিক সেই ভাবেই থাকব? নাকি চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে শুধু বাংলাদেশি নয় গোটা বিশ্বের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলব সুশিক্ষার মাধ্যমে!
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ধারার একমাত্র বাহক শিক্ষক সমাজই যদি মজবুত না হয়, শিক্ষার্থী নামক অভিযাত্রীরা কি নির্বিঘ্নে শিক্ষা নামক বৈতরণী পাড়ি দিতে পারবেন? সে প্রশ্ন সব নাগরিকের, সব অভিভাবকের। শিক্ষকদের ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি জাগ্রত করা, নতুন নতুন শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষতা ও কৌশল বৃদ্ধি করা, দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতন থেকে কার্যসম্পাদনের জন্য শিক্ষকদের উৎসাহিত করতে হবে। এই শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে -একে অপরের থেকে জানা।
মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও নিবিড় প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেশে সুশিক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে। তা বাস্তবায়নের জন্য আমি দেশে একটি বা একাধিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষকদের মধ্যে বুনিয়াদি, কার্যকর ও আধুনিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার এক নতুন চিন্তা সরকার ও দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করেছি।
এ লক্ষ্যে আমি সরকারকে অনুরোধ করেছি যেন আধুনিক, বিজ্ঞান মনস্ক এক অগ্রণী চিন্তায় আমার পৃথিবী উদ্ভাসিত হয় আমার জ্ঞানের আলোকে! এই শিক্ষা হবে আমাদের উপার্জনের হাতিয়ার। কারণ শিক্ষাগ্রহণের পরেই প্রতিটি শিক্ষার্থীর সব ব্যস্ততা আবর্তিত হয় প্রত্যাশিত একটি চাকুরি ঘিরে।
এ ক্ষেত্রে দেশে বর্তমান এমন অবস্থা বিরাজ করছে যেখানে উচ্চশিক্ষিত হতে যত বছর সময় লাগছে চাকুরি পেতে সেই শিক্ষার্থীকে তার চেয়েও বেশি সময় অপচয় করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমি একাধিক আধুনিক ধারণা দিয়েছি। যেমন বর্তমান বিশ্বে চলছে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং গোটা বিশ্বের শিল্পকারখানা, প্রযুক্তি তাকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। পৃথিবীর উন্নত দেশে এখন আজীবন চাকুরি বলে কিছু নেই। চাকুরি আছে ততদিন, যতদিন কাজ আছে এবং কাজ আছে ততদিন যতদিন চাহিদা আছে। শেয়ার মার্কেট নির্ধারণ করছে বর্তমান কর্মসংস্থান ও চাকুরির স্থায়িত্ব। শেয়ারহোল্ডার, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্লাইমেট পরিস্থিতি- এসব বিশাল আকারে প্রভাব বিস্তার করছে শিল্পকারখানা এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে।
শিক্ষা ও শিক্ষার মান নির্ভর করছে গ্লোবাল চাহিদার ওপর এবং তাও হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট লেভেলে। সে ক্ষেত্রে নিশ্চিত করে বলা কঠিন কী পড়লে সারাজীবন চাকুরির গ্যারান্টি মিলবে। তবে সারাজীবন টেকসই ইন্ডাস্ট্রি প্রভাইডার এবং যোগ্য নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকতে হলে দরকার সময়োপযোগী সুশিক্ষা। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ঊর্ধ্বমুখী এক দেশ। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ও সময়ের স্রোতে এ দেশের সব সেক্টরেই লেগেছে আজ ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। কিন্তু আমাদের ধ্যান-জ্ঞানে এ ছোঁয়া আজও লাগেনি।
এ সময়ে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এবং প্রত্যেকটি শিক্ষককে জানতে হবে চাহিদাগুলো কী এবং তার জন্য কী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সব শ্রেণির শিক্ষককে সুশিক্ষার আওতায় আনতে ও তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প নেই।
দেশের সব শিশুশিক্ষা বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সবস্তরের শিক্ষকবৃন্দ প্রশিক্ষণ প্রদান ও গ্রহণের একটি সমন্বিত কার্যক্রমের আওতায় থাকবে। যেখানে দেশ-বিদেশের বড় বড় কোম্পানি বা সংস্থার মালিক বা সিইও, কর্মকর্তা, গবেষক, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকবৃন্দ একত্রিত হয়ে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি ও যুগোপযোগীকরণে সহায়তা প্রদান করবে।
এছাড়া শিক্ষকদের ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতৃত্বের গুণাবলি জাগ্রত করা, নতুন নতুন শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে দক্ষতা ও কৌশল বৃদ্ধি করা হবে এই বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য। এমতাবস্থায় শিশু শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নিবিড় নজরদারি চালু রাখতে হবে। কী শিক্ষা, কেন শিক্ষা, শিক্ষার উদ্দেশ্য কী এবং তা কীভাবে মনিটরিং করতে হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।
শিশুদের ১-১৫ বছর বয়সের মধ্যে সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মানবতার ফর্মে আনতে হলে মানসম্পন্ন পরিবেশের মধ্যে শিক্ষাদান করে গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে পর্যায়ক্রমে গড়ে তুলতে হবে সুশিক্ষার সার্বিক অবকাঠামো, যেখানে থাকবে জানার থেকে শেখা কন্সেপ্ট। কোনো প্রকার দুর্নীতি বা অনিয়ম যেন কলুষিত করতে না পারে শিক্ষা প্রশাসনকে, শিক্ষাকে। একই সঙ্গে গণতন্ত্রমনা ও সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে নিরাপদে ও গর্বের সঙ্গে দায়িত্বকর্তব্য পালন করবে এবং মতামতের ভিন্নতা সত্ত্বেও খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে তারা সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।
রহমান মৃধা
সুইডেন প্রবাসী