ভারতের সর্বদক্ষিণের একটি সমুদ্রবন্দরে আজ রোববার দক্ষিণ চীন সাগর হয়ে আসা ঝেন হুয়া ১৫ নামের একটি জাহাজের নোঙর করার কথা রয়েছে। এর মাধ্যমেই উদ্বোধন হচ্ছে কেরালায় অবস্থিত ভিজিনজাম বন্দরের। জাহাজটি আসার পর বন্দরের বড় ক্রেনগুলো কনটেইনার নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, চাঞ্চল্য তৈরি হবে বন্দরে।
তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই বন্দর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট কনটেইনার পোর্ট বা বন্দরের জগতে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ এই বন্দরে বিভিন্ন দেশের জাহাজ নোঙর করে তেল ভরাট ও পণ্য এক জাহাজ থেকে আরেক জাহাজে ওঠানো যাবে।
ব্লুমবার্গকে উদ্ধৃত করে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, ভৌগোলিকভাবে ভিজিনজাম বন্দরের অবস্থান ভারতের সর্বদক্ষিণে। এই বন্দর চালু করার মধ্য দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক সমুদ্র–বাণিজ্যে নিজেদের অংশীদারি আরও বাড়াতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে যেখানে রয়েছে চীনের আধিপত্য। এ ছাড়া ভারত যে চীনের বিকল্প উৎপাদনকেন্দ্র হয়ে উঠতে চাইছে, এই বন্দর সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। এতে ভারতে কার্গো আসা–যাওয়ার ব্যয় কমবে।
এই বন্দর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব গৌতম আদানির মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই বন্দর আদানির মালিকানাধীন গোষ্ঠী নির্মাণ করেছে। গৌতম আদানি অবশ্য চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে নানা ধরনের বিতর্কের মুখে রয়েছেন। একের পর এক জালিয়াতির অভিযোগ উঠছে আদানির বিরুদ্ধে। এতে তাঁর সম্পদমূল্য অনেকটাই কমেছে।
ভিজিনজামের ভৌগোলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথের পাশে তার অবস্থান সেই পথে বিশ্বের ৩০ শতাংশ কার্গো জাহাজের চলাচল। সেই সঙ্গে বন্দরের গভীরতা ২৪ মিটারের বেশি। এসব কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজগুলো ভেড়ার জন্য এই বন্দর আদর্শ। এত দিন ভারতের বন্দরগুলোর গভীরতা কম থাকার কারণে আন্তর্জাতিক বড় বড় জাহাজ কলম্বো, দুবাই ও সিঙ্গাপুরের বন্দরে ভিড়ত।
মুম্বাইয়ের টিসিজি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা চকরি লোকপ্রিয় ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, বিশ্বের সমুদ্র–বাণিজ্যের ৫০ ভাগ ভারত মহাসাগর দিয়ে হয়। ভিজিনজাম বন্দরের প্রাকৃতিক সুবিধার কারণে বড় জাহাজ আকৃষ্ট হবে, তাতে আদানি পোর্ট অর্থাৎ গৌতম আদানির যে সংস্থা এই বন্দর নির্মাণ করেছে, তার পরিচালনা মুনাফা অনেকটা বাড়বে।
এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জাহাজ পরিবহনের সক্ষমতা কম থাকার কারণে এত দিন ভারতের বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের বন্দর মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২০ সালে ভারতে কনটেইনার ওঠানামা হয়েছিল মাত্র ১৭ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৭০ লাখ টিইইউ, যেখানে চীনের হয়েছিল ২৪ কোটি ৫০ লাখ টিইইউ।
এদিকে আদানি পোর্টের ওয়েবসাইটের সূত্রে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, এই বন্দরে জাহাজগুলো যেমন দ্রুত ভিড়তে পারবে, তেমনি সেখান থেকে দ্রুত ঘুরেও যেতে পারবে। বিশ্বের বৃহত্তম মেগাম্যাক্স কনটেইনার জাহাজও এই বন্দরে ভিড়তে পারবে। প্রথম ধাপে এই বন্দরের সক্ষমতা হবে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ টিইইউ-পরবর্তী পর্যায়ে এখানে আরও ৬২ লাখ টিইইউ সক্ষমতা যুক্ত হবে।
তবে বন্দর নির্মাণই শেষ কথা নয়, বন্দর থেকে কারখানা ও গুদামে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সড়ক ও রেল সংযোগ থাকতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তা না হলে বন্দরের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাওয়া যাবে না।
অর্থসংবাদ/এসএম