শনিবার (১০ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় ভোরে হওয়া ম্যাচে ব্রাজিলের উজ্জীবিত ফুটবলের সামনে পাত্তাই পায়নি বলিভিয়া। রবার্তো ফিরমিনো, নেইমার জুনিয়র, ফিলিপে কৌতিনহোদের উদ্ভাসিত পারফরম্যান্সে ৫-০ গোলের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে ব্রাজিল। যা তাদের বসিয়েছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।
ঘোর অনিশ্চয়তা ছিল নেইমারকে ঘিরে। কোচ তিতে জানিয়েছিলেন, দলের সেরা খেলোয়াড়ের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। ম্যাচের শুরুতেই ব্রাজিল সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটে পিঠের ব্যথা কাটিয়ে নেইমার একাদশে জায়গা করে নেওয়ায়। আর ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পর হাসিটা আরও চওড়া হয়েছে তাদের। বলিভিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের অভিযান শুরু হয়েছে সেলেসাওদের গোলোৎসব করে।
সাও পাওলোর ম্যাচের প্রথমার্ধে ব্রাজিল পায় ২ গোল, এরপর দ্বিতীয়ার্ধে আসে আরও ৩টি। জোড়া গোল করেছেন রবের্তো ফিরমিনো। আর একবার করে জাল খুঁজে পেয়েছেন মারকিনুস ও ফিলিপে কুতিনিয়ো। অন্য গোলটি এসেছে আত্মঘাতী থেকে। চোট শঙ্কা কাটিয়ে মাঠে নামা নেইমার বল লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও অবদান রেখেছে দুটি গোলে।
১১ মাস পর প্রথমবার মাঠে নামা, তাও আবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, কিন্তু ব্রাজিলকে দেখে সেটা বোঝার উপায় কই! ছন্দময় ফুটবলে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের বাছাই শুরু করেছে দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখিয়ে। সেলেসাওদের বাছাই মার্চে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে হয়নি। তবে লম্বা বিরতি যে তিতের দলের কিছুই কাড়তে পারেনি, সেটা স্কোরলাইনই বলে দিচ্ছে।
বলিভিয়ার বিপক্ষে শুরু থেকেই প্রভাব বিস্তার করে খেলেছে ব্রাজিল। প্রথম তিন মিনিটে ২ গোলে পেয়ে যেতে পারতো তারা। যদিও এভারটন ও মারকিনুস সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেছেন। তৃতীয় মিনিটে হেড পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে গেলেও ১৬তম মিনিটে আর ভুল করেননি মারকিনুস। প্যারিস সেন্ত জার্মেই ডিফেন্ডারের হেডেই গোলোৎসবের শুরু ব্রাজিলের। দানিলোর ক্রস জোরালো হেডে পাঠিয়ে দেন তিনি জালে।
সফরকারীদের ভঙ্গুর রক্ষণ আরেকবার স্পষ্ট হয় যখন রেনান লোদি একেবারে ফাঁকায় থেকে ছয় গজ বক্সের ভেতর ক্রস করেন ফিরমিনোকে। লিভারপুল ফরোয়ার্ডের গোল করতে কোনও অসুবিধাই হয়নি।
বিরতির পর এই ফিরমিনো আবারও নাম তোলেন স্কোরশিটে। এবারের গোলে অবদান রাখেন নেইমার। পিএসজি ফরোয়ার্ডের পাস ধরে যখন তিনি বল জালে জড়ালেন, ম্যাচ ঘড়িতে তখন ৪৯ মিনিট।
এক নম্বর গোলকিপার আলিসনের চোটে ব্রাজিলের গোলবারের নিচে দাঁড়ানো ওয়েভার্টনকে ৫০ মিনিটে ব্রুনো মিরান্দার শটের আগ পর্যন্ত কিছুই করতে হয়নি। অন্যদিকে গোলের জন্য আরও মরিয়া হয়ে উঠে ব্রাজিল। আক্রমণের পর আক্রমণ চালাতে থাকে। ৬৬ মিনিটে তেমনই একটি আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দেন হোসে কারাসকো।
এরপর শেষ বাঁশি বাঁজার ১৭ মিনিট আগে নেইমারের পাস ধরে বলিভিয়ার কফিনে শেষ পেরেকটি মারেন কুতিনিয়ো।
নেইমার গোল না পেলেও ব্রাজিলের খেলার প্রাণ ছিলেন তিনিই। অনুশীলনের বাইরে থেকে পুরো ৯০ মিনিট খেলার সঙ্গে সতীর্থদের দিয়ে ২ গোল করে ব্রাজিলের জার্সিতে আবারও নিজেকে প্রমাণ করেছেন ১০২তম ম্যাচ খেলতে নামা ২৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
ব্রাজিল একাদশ: ওয়েভারটন, রেনান লোদি, মারকুইনহোস, থিয়াগো সিলভা, দানিলো, ফিলিপে কৌতিনহো, ক্যাসেমিরো, ডগলাস লুইজ, নেইমার, রবার্তো ফিরমিনো এবং এভারটন।
ব্রাজিল সাবস্টিটিউট: এডেরসন, আদেরবার সান্তোস, অ্যালেক্স তেলেস, রদ্রিগো সাইও, ফেলিপে, ফাবিনহো, ব্রুনো গুইমারেস, রিচার্লিসন, ম্যাথিউন কুনহা, এভারটন রিবেইরো, রদ্রিগো এবং গ্র্যাব্রিয়েল মেনিনো।
বলিভিয়া একাদশ: কার্লোস লাম্পে, হোসে সাগ্রেদো, হোসে কারাসকো, হেসুস সাগ্রেদো, হুয়ান গ্যাব্রিয়েল ভালভার্দে, ব্রুনো মিরান্ডা, অ্যান্তনিও বুস্তামান্তে, ডিয়েগো আয়ার, ক্রিশ্চিয়ান আরাবে, ফার্নান্দো সালদিয়াস এবং সিজার মেনাকো।
বলিভিয়া সাবস্টিটিউট: রুবেন কোরদানো, জিমি রোকা, লেওনার্দো জাবালা, গুইমার জাস্টিনিয়ানো, লুইস বানেগাস, রুডি কারদোজো, ঝাসমানি কাম্পোস, ফ্রাঞ্জ গঞ্জালেজ, কার্লোস এনরিক আনেজ, বরিস সেসপেদেস এবং কার্লোস সাউসেদো।