পুঁজিবাজারের অবকাঠামো এবং আইনগত সংস্কারে বাজার এখন অনেক পুঁজি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লিমিটেডের ৬২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর নিকুঞ্জের ডিএসই টাওয়ারের মাল্টিপারপাস হলে ডিএসইর বার্ষিক সাধারণ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
ডিএসইর মহাব্যস্থাপক ও কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আসাদুর রহমানের সঞ্চালনায় বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। সভার শুরুতেই ডিএসইর সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই-আলম সিদ্দিকী ও সাবেক ভাইস চেয়ারমান খাজা গোলাম রসূলসহ ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার কোম্পানির প্রতিনিধি, কোম্পানির চেয়ারম্যান, সাবেক পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডার/ট্রেকহোল্ডার প্রতিনিধিবৃন্দের আপনজন যাঁরা ইন্তেকাল করেছেন তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
ডিএসইর ৬২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, বিজয়ের এই মহান মাসে স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সোনার বাংলার সপ্নচারী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি শহিদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যগণকে, যারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালরাএিতে শহিদ হয়েছেন। শ্রদ্ধাবনত চিওে স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সহকর্মী ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় জেলখানায় শহীদ হওয়া জাতীয় চার নেতাকে। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ত্রিশ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ মা বোনকে। আমি মহান আল্লাহ্ কাছে সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে সমন্বয় করে ডিএসই তথা পুঁজিবাজার উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। শুরু থেকেই পরিচালনা পর্ষদ সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা ভিওিক নীতি কৌশল গ্রহণ করছে। সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের বিশেষ অঙ্গীকার। এই জন্য আমরা প্রযুক্তিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা এই সল্প সময়ে আইসিটি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের উদ্দেশ্য দেশের পুঁজিবাজারে স্মার্ট ত্রুটিহীন লেনদেন প্লাটফর্ম উপহার দেয়া। সে লক্ষ্যেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা সকলেই অবগত আছেন, সপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে চারটি স্তভ রয়েছে এর মধ্যে স্মার্ট ইকোনমি হলো অন্যতম। আর স্মার্ট ইকোনমির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হলো সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার। সে লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি৷
‘গত দেড় দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসী নেতৃত্ব, দেশপ্রেম ও দূরদশী অর্থনৈতিক দর্শনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত। এক সময় বিশ্বের দারিদ্রতম ১০টি দেশের অন্যতম বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত অর্থনীতির দেশ। এই সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিকল্প নেই। সরকারেরও এ বিষয়ে আন্তরিকতা রয়েছে। চলমান ও বাস্তবায়নাধীন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেগাপ্রকল্প দেশের টেকসই অথনৈতিক অগ্রযাত্রার ভিত্তি মজবুত করে চলেছে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে এবং ঢাকা বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবারীর অদুরে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান রয়েছে৷ এছাড়াও চলমান পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবারী গভীর সমুদ্র বন্দর, রমপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, ৫০ জেলায় ২০২১.৫৬ কিলোমিটার ১০০টি সড়ক ও মহাসড়ক উদ্বোধনসহ আরো কয়েকটি প্রকল্প সমাপ্ত হলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। নিংসন্দেহে সমগ্র দেশের অর্থনীতিতে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে। ইতোমধ্যে এই সব অবকাঠামোকে ঘিরে সারা দেশের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেশের পুঁজিবাজার হতে পারে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম মাধ্যম। আমরা সরকারের উন্নয়ন অংশীদার হতে প্রস্তুত। পুঁজিবাজারের অবকাঠামো এবং আইনগত সংস্কারে বাজার এখন অনেক পুঁজি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অটোমেটিক ও নিরবিচ্ছিন্ন লেনদেন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১০৬ রেক সম্বলিত অতাধুনিক ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে৷ এই ডাটা সেন্টার আন্তর্জাতিক মানের রেটেড-এ সনদ লাভ করেছে৷ এর বাইরেও ডিএসই এনডিআরর অবকাঠামো তৈরী করেছে এবং বাকী কাজগুলো এগিয়ে চলেছে। এনডিআর প্রযুক্তিগত দূর্ঘটনা হতে ডিএসইর ট্রেডিং সিস্টেমসহ সকল সার্ভিস বা সিস্টেমগুলো সুরক্ষা দিবে। ডাটা সেন্টার এবং ডিআর প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিএসই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রবেশ করবে এবং ট্রেডিং প্লাটফর্ম আরও বেশি সুরক্ষিত হবে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার দৃঢ় অঙ্গীকারের মাধ্যমে সমৃদ্ধির ৭০ বছর ধরে সময়ের সাথে আগামীর পথে এগিয়ে চলছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। অর্থনৈতিক তথা শিল্পোন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার সবসময়ই পুঁজিবাজারকে সমৃদ্ধ করছে। পুঁজিবাজারের সব দুর্যোগকালীন সময়েই সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের সপ্নদ্রষ্ঠা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, যিনি পুঁজিবাজারের যে কোন সংকটকালীন সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের প্রতি। যিনি বিগত দিনে বাজেটরীয় সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উত্সাহিত করেছেন।
‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইক্যুইটির পাশাপাশি নতুন পণ্যভিত্তিক বৈচিত্রময় বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ পলিসিগত বাজারবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং কমিশনারদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এছাড়াও তিনি স্টক এক্সচেঞ্জের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে নীতি সমর্থন, দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শের জন্য সংশিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। আরো ধন্যবাদ জানাই অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ, বোর্ড কমিটি, কৌশলগত বিনিয়োগকারী, ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন (ডিবিএ), ডিএসইর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) সহ ট্রেকহোল্ডার প্রতিনিধিবৃন্দকে।’
মো. সিদ্দিকুর রহমান বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে তিন বছরেরও অধিক সময় দায়িত্ব পালন করেন এবং সংঘবিধি ১৪০ অনুসারে এক-তৃতীয়াংশ শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের অবসর সংক্রান্ত বিধান অনুসারে তিনি ৬২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য, শেয়ারহোল্ডার এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সভায় বক্তব্য প্রধান করেন শ্যামল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজেদুল ইসলাম, বুলবুল সিকিউরিটিজ লিমিটেডর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. এস. শাহুদুল হক বুলবুল, গ্রীনল্যান্ড ইক্যুইটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম, রাজীব এহসান, এ্যাংকর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জেড এম নাজিম উদ্দিন, এন এল আই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. শাহেদ ইমরান, আলী সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম. আকবর আলী, দোহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. এম সামসুদ্দোহা, ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল ইসলাম, বি. এল. আই. সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
পরে শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতিতে বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০২৩ সালের ৩০ জুন তারিখে সমাপ্ত অর্থবছরের কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীর প্রতিবেদন, নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী গ্রহণ, বিবেচিত ও অনুমোদিত হয়। এছাড়াও ৩০ জুন ২০২৩ তারিখে সমাপ্ত অর্থবছর পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশকৃত ৪ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয় এবং পরবর্তী অর্থবছরের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ ও তাঁদের পারিতোষিক নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়াও ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ডিএস্ইর পরিচালনা পর্ষদের ১টি শূণ্য পদে নির্বাচনে রিচার্ড ডি রোজারিও কে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষনা করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ এ হাফিজ এবং ৬২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভূক্ত হন।
পরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু শেয়ারহোল্ডারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং রেগুলেটর, শেয়ারহোল্ডার এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে একসাথে কাজ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সভার শেষাংশে, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজজামান সিপিএ পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও বাজার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।