এ দ্বিপাক্ষিক শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত ‘চায়না-বাংলাদেশ বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) ও চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিইএবি) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
তিনি বলেন, দুই দেশ একসঙ্গে সফলভাবে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখছে। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। চীনা কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীরে সঙ্গে সমন্বিতভাবে এদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ১৩ বছর ধরে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। গত তিন প্রান্তিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১৬ শতাংশ কমেছে। এটি বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। চীন বাংলাদেশের এফডিআই এর অন্যতম উৎস। বাংলাদেশে বর্তমানে চীনের এফডিআই স্টক ৩.১৭ বিলিয়ন ডলার।
বিসিসিসিআই এর আল মামুন মৃধা বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতেই বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্যের পরিমাণ উচ্চস্তরে উন্নীত হয়েছে। চাইনিজ কাস্টমস এর তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বিসিসিসিআই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চেম্বার। ৭০০ এরও বেশি এন্টারপ্রাইজ এই চেম্বারের সদস্য, যার মধ্যে ৫০০ এর বেশি চীনা এন্টারপ্রাইজ রয়েছে। বিসিসিসিআই ও এর সদস্যরা আরও বেশি চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং বাণিজ্য বাড়াতে কঠোর পরিশ্রম করছে। এজন্য গত কয়েক বছর ধরে বিসিসিসিআই চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি), বিডা, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে কাজ করছে।
সিইএবির প্রেসিডেন্ট কে চিয়াংলিয়াং বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার হতে পেরে চীনা বিনিয়োগকারীরা গর্বিত। আমাদের সদস্য কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে প্রত্যক্ষভাবে ৫ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রেও চীনা কোম্পানিগুলো সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীনের বিকাশমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও সমৃদ্ধির শক্তিশালী ভিত তৈরি করেছে। জোহান্সবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, সড়ক ও সেতু, রেলওয়ে ও সিভিল এভিয়েশন, মেরিন অ্যান্ড হারবার, আইসিটি, টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট সেক্টর, ট্রেড অ্যান্ড সার্ভিস সেক্টর, নারী উদ্যোক্তা, এসএমই, করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান- ক্যাটাগরিতে এ বছর মোট ২৭টি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি বাংলাদেশি কোম্পানি ও ১২টি চাইনিজ কোম্পানি।
অনুষ্ঠানে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা সম্প্রসারণে অসামান্য অবদান রাখায় মৃধা বিজনেস লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিসিসিসিআইসের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা এবং চীনা কোম্পানি নিউ এরা ফ্যাশনস এমএফআরএস (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাং উয়েনসেং পুরস্কার পেয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চীনা কোম্পানি চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশের যমুনা ম্যাটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রোড ও সেতুখাতে চীনা কোম্পানি চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি) ও বাংলাদেশের মীর আক্তার হোসাইন লিমিটেড, রেলওয়ে ও সিভিল এভিয়েশন সেক্টরে চীনা কোম্পানি চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পুরস্কার পেয়েছে।
পানি ও পরিবেশ উন্নয়নে চীনা কোম্পানি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না এবং বাংলাদেশের আরিদদ টেক সার্ভ লিমিটেড, মেরিন ও হার্বার সেক্টর উন্নয়নে চীনা কোম্পানি সানি হেভি ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং বাংলাদেশি কোম্পানি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড এবং আইসিটি সেক্টরে চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে টেকনোলজিস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং বাংলাদেশি কোম্পানি ডেফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড পুরস্কার পেয়েছে।
এছাড়া, টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট সেক্টরে চীনা কোম্পানি এলডিসি গ্রুপ এবং বাংলাদেশি কোম্পানি শাহ ফতেউল্লাহ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সেবা খাতের উন্নয়নে চাইনিজ কোম্পানি নিউ হোপ লিউহি বাংলাদেশ রিজিওন এবং বাংলাদেশি কোম্পানি হেনা এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড এবং সেমস গ্লোবাল পুরস্কার পেয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে অবদান রাখায় নারী উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে চীনা কোম্পানি ইউনিমাস স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড এবং বাংলাদেশি কোম্পানি নিটেক্স, এসএমই ক্যাটাগরিতে চীনা কোম্পানি নিউটপ টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেড এবং বাংলাদেশি কোম্পানি তোহফা এন্টারপ্রাইজেস, সিএসআর ক্যাটাগরিতে চীনা ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন এবং বাংলাদেশের প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি পুরস্কার পেয়েছে।